The news is by your side.

বৈশ্বিক মন্দা: ইউরোপের অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ শুরু

0 122

ইউরোপের অর্থনীতিতে ভাটার টান দেখা যাচ্ছে। সংকুচিত হয়ে পড়ছে ব্যবসায় কর্মকাণ্ড। মুদ্রাস্ফীতিও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই মন্দার দিকে এগোচ্ছে এবং আসছে শীতকালেই (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) গভীর মন্দা দেখা দেবে। নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এই মুহূর্তে নজিরবিহীন সংকট মোকাবিলা করছে ইউরোপের অর্থনীতি। খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি সংকটের ক্রমবর্ধমান চাপ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ১৯টি দেশকে নিয়ে গঠিত ইউরো জোন। অভিন্ন মুদ্রার এ দেশগুলোতে গত মাসে যতটা মনে করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে ২৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে ইউরো। এই প্রথম ইউরোর মান ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

রিপোর্ট মতে, অক্টোবর মাসে দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ১০.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। যা এ অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) টার্গেটের প্রায় পাঁচগুণেরও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুদহার বাড়ানোর পথে হাটছে ইসিবি। যা ইতোমধ্যে ঋণের জালে জর্জরিত গ্রাহকের পিঠে নতুন বোঝা হয়ে চেপে বসেছে।

অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য বোঝার জন্য একটা ভাল নির্দেশিকা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স। ইউরো জোনের সেই ইনডেক্সও পতনের দিকে। গত সেপ্টেম্বরের ৪৮.১ থেকে অক্টোবরে ৪৭.৩-এ এসে ঠেকেছে। যা গত ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ৫০-এর নিচে আসলেই যা অর্থনীতির সংকোচন নির্দেশ করে।

ইউরোপের অর্থনীতি তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এগুলো হচ্ছে—এনার্জি স্বল্পতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কোনো কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

এদিকে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়েও প্রতিনিয়ত খারাপ খবর আসছে। চলতি বছরের শুরুতেই গুঞ্জন শোনা যায়– মন্দা আসছে। এরপর প্রায় ৯টি মাস পেরিয়েছে। এ সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে দুর্ভাবনা বেড়েছে বৈ কমেনি। এখন আর গুঞ্জন নয়, বরং দিনে দিনে সাইরেনের মতো জোরালো হচ্ছে সতর্কবার্তা।

বিশ্ব অর্থনীতির পতনোন্মুখ দশা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রধান থেকে শুরু করে নোবেল জয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানের মতো শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞরা।

আঙ্কটাডের গত মাসের প্রতিবেদন মতে, করোনা মহামারির দুই বছরের তাণ্ডবের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার মধ্যদিয়ে এগোচ্ছে। আগামী বছর বিশ্বব্যাপী এ মন্দা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মন্দার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পাবে, বিনিয়োগ কমে যাবে। এর প্রভাবে কর্মসংস্থানের গতিও কমবে, বাড়বে বেকারত্ব। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এর আগে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের একাধিক প্রতিবেদনে এ ধরনের শঙ্কার কথাই জানিয়েছে।

গত মাসে এক জরিপ চালায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এতে অংশ নেন বিশ্বের সরকারি ও বেসরকারি খাতের খ্যাতনামা ২২ অর্থনীতিবিদ। এর মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, ২০২৩ সালের শুরুতেই ধেয়ে আসতে পারে মন্দার ঝড়। অর্থাৎ আর মাত্র তিন মাস বাদেই বিশ্ব অর্থনীতির তরী ডোবার শঙ্কা তাদের।

বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা নিরুপণের জন্য সুপরিচিত একটি সংস্থা– যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা-ভিত্তিক নেড ডেভিস রিসার্চ। তাদের গবেষণা মডেল অনুসারে, আগামী বছরে মন্দার ঝুঁকি এখন ৯৮.১ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনা মহামারি-জনিত মন্দা এবং ২০০০-০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর যা সর্বোচ্চ।

বড় শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়াতে থাকায় মন্দার গ্রাসেই পড়তে যাচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতিটি। আর মার্কিন তরী ডুবলে বাকি বিশ্বকে সঙ্গে নিয়েই ডুববে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইউরোপের বৃহত্তম তিন অর্থনীতি– জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য আগামী বছর দীর্ঘমেয়াদি মন্দার মধ্যে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর রাশিয়া থেকে জ্বালানি সরবরাহে ধস নামার ঘটনাকেই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে এমনটাই পূর্বাভাস দেয় অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।

২০২৩ সালে সমগ্র ইউরো জোনে মাত্র .০৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে মনে করছে ওইসিডি। আর আগামী বছরের বেশিরভাগ সময়েই মন্দার গ্রাসে থাকবে অর্থনৈতিক ব্লকটির অনেক দেশ। এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চীনের কেরোনা মোকাবিলায় নেয়া লকডাউনের কড়াকড়ির ফলে তা মারাত্মক হোঁচট খাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.