পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে অন্তত ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ৭১ জন। এতে করে দেশটিতে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আহত এক হাজার ৫২৭ জন। দেশটির জাতীয় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
বন্যায় বিপর্যস্ত দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তা পেতে বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সাহায্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্য কয়েকটি দেশ।
তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে আরও অর্থ প্রয়োজন।
সালমান সুফি নামের ওই কর্মকর্তা বলেন, জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় হাজারের বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, লাখো মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। এর পরিস্থিতিতে জনগণকে সহায়তায় পাকিস্তান সরকার তার ক্ষমতার সর্বোচ্চটাই করছে।
সালমান সুফি বলেন, পাকিস্তানে এমনিতেই অনেক অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যে সময় আমরা এ অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠছিলাম ঠিক তখন আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে দিয়ে দিচ্ছি। সত্যি বলতে পাকিস্তানের এখন আন্তর্জাতিক সাহায্যের অনেক বেশি প্রয়োজন।
দেশটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বেলুচিস্তানে চারজনের, গিলগিট বালতিস্তানে ছয়জনের, খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৩১ জনের এবং সিন্ধুতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ১৪ জুন থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানজুড়ে তিন হাজার ৪৫১ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ধসে পড়েছে ১৪৯টি ব্রিজ এবং ১৭০টি দোকান ধ্বংস হয়েছে।
এছাড়া নয় লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৮ বাড়ি আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ছয় লাখ ৬২ হাজার ৪৪৬ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪১২টি বাড়ি পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়েছে। সেই সঙ্গে সাত লাখ ১৯ হাজার ৫৫৮ গবাদি পশু মারা গেছে।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৭২ ঘণ্টায় দেশটিতে অন্তত ১১০ জেলা নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডনের খবরে বলা হয়েছে, বন্যায় পাকিস্তানের অর্ধেকের বেশি ডুবে গেছে। এতে দুর্দশায় পড়েছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ।
গতকাল শনিবার সিন্ধু প্রদেশের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এর আগে চলমান অবিরাম বৃষ্টিপাতকে ‘জলবায়ু-প্রবর্তিত মহাকাব্যিক মানবিক সংকট’ বলে অভিহিত করে পাকিস্তান সরকার বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে।