উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানির পরও নাগালের মধ্যে আসছে না বাজার। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী আমদানি না হওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ আরও একদফা বেড়ে সব ধরনের পেয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০টা পর্যন্ত। রাজধানীর শ্যামবাজারে দেশি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি। মিশর ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
চীন থেকে আনা পেঁয়াজ গেলো দিন ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও, আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ দিনদিন কমছে। উড়োজাহাজে আনা পেয়াজ শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৪০ টাকা। ফলে এখনকার এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম গত বছরের সাড়ে পাঁচ কেজির সমান।
অবশ্য মানুষ এখন পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যে পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি লাগত, তারা এখন কিনছে দুই কেজি। দরিদ্র মানুষকে পেঁয়াজ কেনা বাদ দেওয়ার পর্যায়ে নিতে হয়েছে। অনেকে এখন পেঁয়াজের বদলে পেঁয়াজপাতা কিনছেন। নতুন মৌসুমের শুরুতে গোড়ায় ছোট ছোট পেঁয়াজসহ পেঁয়াজপাতা বিক্রি হচ্ছে। কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অথচ আশা করা হয়েছিল, উড়োজাহাজে উড়িয়ে এনে সরবরাহ বাড়ালে দাম কমবে। বিপুল পরিমাণ আমদানির খবরে বাজারও সাড়া দিচ্ছিল। শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারে দাম কমছিল।
কিন্তু গত বুধবার থেকে বাজার আবার বেঁকে বসে। বাড়তে শুরু করে দেশি পেঁয়াজের দাম। অন্যদিকে শুক্রবার ও শনিবার বেড়ে যায় আমদানি করা পেঁয়াজের দামও।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল এক অনুষ্ঠান শেষে পেঁয়াজ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বছরের এ সময়টায় প্রতি মাসে এক লাখ টন করে পেঁয়াজ আমদানি হতো। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমদানি হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টন করে। ফলে স্বাভাবিক আমদানির চেয়ে কম হয়েছে ৭৫ হাজার টনের মতো। তিনি বলেন, মিসর থেকে উড়োজাহাজে আমদানি করতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ২০০ টাকার বেশি পড়ছে। ওই পেঁয়াজ সরকার ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে।
টিপু মুনশি আরও বলেন, ২৯ নভেম্বরের মধ্যে কম করে হলেও ১২ হাজার টনের বড় চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। ১০ দিনের মধ্যে নতুন দেশি পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসা শুরু করবে বলে আশা করা যায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, তারা ঢাকার ৫০টি জায়গায় ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি জেলায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে সংস্থাটি।
পেঁয়াজের এই সংকটের শুরু সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। এর আগের দিন বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ টাকার আশপাশে ছিল। এরপরের ধাক্কা আসে ২৯ সেপ্টেম্বর, ভারত রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ ধাক্কায় পেঁয়াজের বাজার ১৫০ টাকা ছাড়ায়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর।