The news is by your side.

কথামৃত বা রচনামৃত

0 320

নির্মলেন্দু গুণ

 

মনে হয় অস্থিরতাময় এই কথাগুলো যেন রেসকোর্সে মুজিবের সভা– শরীরে শরীর লাগা লাখো-লাখো স্বনিষ্ঠ সংলাপ।

সন্ধ্যা হলে সব কথা রমনার বুকের গভীরে জমা হয়।

আমি বুঝি কর্ণকুহরে কারা সব্দিতসঘনপদপাতে কথা বলে, কথাবলাকলাকৌশলের মালা গাঁথে বসে বসে।

মাগো, অন্ধকারে ভয় করো না,

আমরা ফুসফুসে আগুন জ্বেলে

তোমার জন্য ঘরে ফিরছি।

পাথরে পাথর ঘষে,

পাথরে হৃদয় ঘষে,

হৃদয়ে হৃদয়।

তাড়াতে তাড়াতে তুমি কত দূর নেবে? এই তো আবার আমি ফিরে দাঁড়িয়েছি।

বদল হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র সিলেট থেকে চুয়াডাঙায়।

এখন শান্ত সব, সল্টলেক একাকী ঘুমিয়ে আছে–যেন পরিত্যক্ত দেশপ্রেমিকের খালি বাড়ি– রাজকার, আল বদরের ভয়ে ভীত, মৃত, ম্রিয়মাণ।

অদৃশ্য ইথার দিয়ে আমি একটি পিয়ন বানিয়েছি।

আমার সমস্ত চিঠি বিলি করে সে-পিয়ন ফিরছে হাওয়ায়।

তোমার বুকে দুটো সূর্য, চোখের মধ্যে অনেক নদী, চুলের মধ্যে আগুনরঙা শীত-সকালের হুহু বাতাস।

মাটির মধ্যে মাথা রেখে তুমি এখন শুয়ে আছো, তোমাকে এখন শহীদ ছাড়া অন্যকিছু ভাবাই যায় না।

কোনদিকে যাবে? কোথায় পালাবে তুমি?

পূর্বে নিশ্চিত সূর্য, পশ্চিমে শত্রুর সীমান্তে অবরোধ।

বাংলাদেশে বর্বরতার নিশ্চিত কবর।

আমার বুকের মধ্যে তার উদ্ধত মৃত্যুর ছায়া, আমার হৃদয়ের মধ্যে তার অবদমনের সদাজাগ্রত ভীতিমূল, আমার জন্মভূমি হা-করা হাঙরের মুখে তোমার চুলের মতো বারবার কেঁপে উঠছে।

ট্রিসিয়া, তোমার জাহাজগুলোকে রেশমের চুলে বাঁধো।

* ট্রিসিয়া– আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কন্যা।

আমি যে হাতে তোমাকে ছুঁই–,

সেই হাতে মাটিকেও

কোনোদিন স্পর্শ করি না।

এখন জমতে দাও ঘাসে-ঘাসে, পত্রপুষ্পে শিশিরের কণা।

যে-ডাল ফুলের ভারে

কলির বৈভবে নত হতে চায়–

হোক, তাকে নত হতে দাও,

নাড়াবে না।

বহু বেদনায় বলি, যাও। অন্য কোনো দিকে নয়, শুধু নীচে, আরও তলে– আনন্দের গোপন ভূতলে যত পারো, যাও।

যেতে যেতে সমুখে যা পাও,

চূর্ণ করো তাকে।

ভাসাও স্বর্গের লোভ-,

অপূর্ণ স্বপ্নের ক্ষোভ

পূর্ণ করো নারীর নরকে।

আত্মহত্যা বুকে এলে চলে যাই

গাছের নিকটে–।

যে গাছ পছন্দ করি, তার শাখা

প্রেমিকার বোনের মতন।

 

♥♥♥

৫ জুন ২০২২।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.