The news is by your side.

এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা

0 114

দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে সরকারের মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। তবে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশই খেলাপি। অবশ্য গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে  রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

খেলাপি ঋণে শীর্ষ দশে থাকা জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, নূর জাহানসহ অন্যান্য গ্রুপ মিলে হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত এক বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী—উচ্চ খেলাপি ঋণের হার বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (সাবেক ওরিয়েন্টাল)। এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৮৩ শতাংশের বেশি খেলাপি। এই ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে ২০০৬ সালে সীমাহীন ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। এই ব্যাংকের আমানতকারীদের অনেকেই এখনও আমানতের টাকা ফেরত পায়নি।

পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির বিতরণ করা ৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকাই খেলাপি।

খেলাপি ঋণের শীর্ষ দশে থাকা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ব্যাংকটি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়।

দেশের ব্যাংক খাতে গত একযুগ ধরে বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, এসএ গ্রুপ, নূরজাহান, অলটেক্স, সানমুন গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি। এসব ঘটনায় সুদসহ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর পুরোটাই এখন খেলাপি।

খেলাপি ঋণের শীর্ষ দশে থাকা সোনালী ব্যাংকে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (বিডিবিএল) সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের আধিক্য বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে এ দুটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ ও ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ খাতের অপর ব্যাংক প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঋণ।

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের প্রতিনিধি দল উচ্চ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে তা কমানোর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি রয়েছে ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ বেশি থাকা অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি বা ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ড. গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হলেই তা উদ্বেগজনক। কাজেই খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

 

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.