একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরবে জাতিসংঘ। গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল এবং গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দিয়েং এ কথা বলেন।
আদামা দিয়েং বলেন, ‘যদিও কিছু কিছু দেশ এর বিরোধিতা করবে, তবু আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে চালানো পাকিস্তানের গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করব।’
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এ দেশে যে গণহত্যা শুরু করে তা স্মরণ করে বলেছেন, ‘পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসররা প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করে।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা এসব মা-বোনকে পুনর্বাসিত করেন।’
প্রেসসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলাপ করেন। আদামা দিয়েং এ সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের বর্বরতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের দৃঢ় সহযোগিতার কথা পুনরুল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা চালানো সেসব নৃশংসতাকারীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
আদামা দিয়েং এ সময় বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ জোরদারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান একা করতে পারবে না। তাই এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ আরো বাড়াতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ রাজ্য রাখাইনে পুনর্বাসিত হোক এবং সেখানে শান্তিপূর্ণ ও বৃহত্তর সমাজ গড়ে উঠুক।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি রোহিঙ্গাদের জন্য আপনার দ্বার অবারিত করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকেও ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয় জনগণকে খুবই ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে।’ রোহিঙ্গাদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য ভাসানচর নামে একটি দ্বীপের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানান। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে দু-একটি এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সরকার শক্ত হাতে এসব মোকাবেলা করেছে।
প্রেসসচিব জানান, আদামা দিয়েং এ সময় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনজন নারী নেতৃত্বের নাম উল্লেখ করেন। তাঁরা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন।
প্রেসসচিব বলেন, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মতোই সফলভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্ষম হবে।
আদামা দিয়েং এ সময় বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তাঁকে ‘শান্তির মানব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেন, তিনি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়ে নানাক্ষেত্রে নারীর অগ্রসরতার চিত্র প্রত্যক্ষ করেছেন। এর কারণ হিসেবে নারীশিক্ষার প্রতি তাঁর সরকারের গুরুত্ব প্রদানও একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উভয়েই ঘটনার পর পরই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
