হোয়াইটে হাউসে থাকার সময়ের স্মৃতি নিয়ে বইট লিখেছেন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নাম দিয়েছেন ‘আ প্রমিজড ল্যান্ড’। মার্কিন ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ পর ১৭ নভেম্বর বইটি প্রকাশ পায়। প্রকাশক পেঙ্গুইন র্যানডম হাউসি বইটির প্রথম সংস্করণ ৩৪ লাখ কপি ছাপিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনই বিক্রি হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ কপি। বহু পাঠক আগেই বইটির অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ পর্যন্ত যতগুলো বই বাজারে এসেছে, প্রথম দিনে বিক্রির দিক থেকে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ‘আ প্রমিজড ল্যান্ড’।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের লেখা ‘মাই লাইফ’ প্রকাশের দিন ৪ লাখ কপি বিক্রি হয়। আর আরেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ‘ডিসিশন পয়েন্ট’ প্রকাশের দিন ২ লাখ ২০ হাজার কপি বিক্রি হয়। এই দুটি বই এ পর্যন্ত যথাক্রমে ৩৫ লাখ ৪০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। ওবামার লেখা এই বইটি আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছে প্রকাশনী সংস্থা। পেঙ্গুইন বলছে, তারা ‘আ প্রমিজ ল্যান্ড’ বিক্রির পরিসংখ্যান দেখে অবাক।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এর আগে তিনটি বই লেখেন। এগুলো হলো ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’, ‘দ্য অডাসিটি অব হোপ’ ও শিশুদের জন্য লেখা বই ‘অব দ্য আই সিং’। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন, যা পাঁচ মাসের মধ্যে ১ কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়।
ডেমোক্র্যাট নেতা বারাক ওবামা ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওবামা ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। হোয়াইট হাউসে থাকতে তিনি যা বলতে পারেননি এই বইয়ে তা প্রকাশ করেছেন।
প্রকাশিত বই প্রসঙ্গে ওবামা টুইট করেন, ‘একটি বই লিখে শেষ করার মতো অনুভূতির সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা হয় না। আমি এটি করতে পেরে গর্বিত।’’
“‘অ্যা প্রমিজড ল্যান্ড’ বইয়ে আমার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালের স্মৃতি, জাতি হিসেবে আমাদের ঝাঁকুনি দেওয়ার শক্তি এবং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূর করে সবার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা সততার সঙ্গে প্রকাশের চেষ্টা করেছি।”
প্রকাশনী সংস্থা পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস বলছে, ৭৬৮ পাতার ওই স্মৃতিকথা ২৫টি ভাষায় প্রকাশ করা হবে।
বইটিতে ওবামা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট, স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার আইন, ২০১১ সালে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
ওবামা তার বইয়ে লিখেন, একটি মিত্র দেশের অভ্যন্তরে একটি সামরিক হামলার নির্দেশ দিলে দেশটির সার্বভৌমত্ব খর্ব হয় বলে তিনি জানতেন। কিন্তু আল কায়েদা নেতাকে হত্যার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাইছিলেন না।
তিনি বলেন, আমরা অ্যাবোটাবাদে যা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তাতে সুপরিচিত মিত্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন, যুদ্ধের কাছাকাছি- কূটনৈতিক ও অপারেশনাল জটিলতা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি ছিল।
ওবামা বলেছেন, তার দুজন ঘনিষ্ঠ মিত্র তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এই অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন। এজন্য ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর এই বই প্রকাশ করেছেন ওবামা।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেন, আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করেছি। তিনি বলেন, আমি ধারণা করেছিলাম যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে করা কলটি আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন হবে, কেননা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ঘটনায় তিনি দেশের মধ্যে চাপে পড়বেন।