বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে (ডিপিএল) খুব গুরুত্ব দিতে চাননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু কেন? একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষেই সেই ব্যাখ্যাটি সবচেয়ে ভালো দেওয়া সম্ভব। বিশ্বকাপ দলে সম্ভাব্যদের অন্যতম মোহাম্মদ মিঠুন সেটি দিলেনও, ‘ডিপিএলে যে উইকেট থাকে, ইংল্যান্ডের উইকেট তো আর ওরকম হবে না।’
একই রকম হবে না আরো অনেক কিছুও। সেই ফিরিস্তিও তুলে ধরলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান, ‘ডিপিএলে বেশির ভাগ ওভারই করে স্পিনাররা। বিশ্বকাপে গিয়ে একটি দলের একাদশে আমরা হয়তো বড়জোর একজন স্পিনারই দেখতে পাব। এর বেশি তো খেলবে না।’ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ডিপিএল খেলা তাই শুধুই হয়ে উঠছে খেলার মধ্যে থাকার এক টুর্নামেন্ট। বিশ্বকাপ ভাবনায় থাকায় কেউ কেউ যেমন এর মধ্যেও পাচ্ছেন বিশ্রাম।
মিঠুনও পেয়েছেন তা। ক্রাইস্টচার্চের নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আগেভাগেই দেশে ফেরার পর আবাহনীর হয়ে দুটি ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যান এখন আছেন বিশ্রামে। কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ফিফটি করা মিঠুন শেষ ম্যাচটি খেলতে পারেননি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায়। বিশ্বকাপ সামনে রেখে যাতে ওই জায়গায় বাড়তি চাপ না পড়ে, সে জন্য বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে তাঁকে খেলাচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী।
চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে না খেলা মিঠুন সম্ভবত খেলবেন না দলের পরের ম্যাচটিও। এরপর খেললেও তা যে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সহায়ক হবে না, সেটি তো আগেই বলেছেন। তাহলে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে এপ্রিলের শেষ দিকে দেশ ছাড়ার আগে ওখানকার কন্ডিশন মাথায় রেখে কোনো প্রস্তুতিই নেবেন না ক্রিকেটাররা? মিঠুন জানালেন সে প্রস্তুতি তারা আলাদাভাবেই নেবেন। ডিপিএলের ফাঁকে ফাঁকেই আয়ারল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি এগিয়ে নেবেন তারা, ‘আইরিশ ও ইংলিশ কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে পেস বল খেলার জন্য আলাদা কাজ করতে হবে আমাদের। একটু বাউন্সি উইকেটে সাইড স্ট্রোকগুলো অনুশীলন করতে হবে। যা ওখানে আমার কাজে দেবে।’
কিন্তু ওখানকার কন্ডিশনও তো এখানে কৃত্রিমভাবে তৈরির উপায় নেই। চাইলেই তো আর বাউন্সি উইকেটও পাবেন না এখানে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই প্রস্তুতির জন্য যে বিকল্প ব্যবস্থা থাকছে, তা অবশ্য নতুন নয়। সাবেক কোচ জেমি সিডন্স যেমন একবার বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে গ্রানাইট পাথরের স্ল্যাব আনিয়েছিলেন অনুশীলনে। তাতে ফেলা হলে বল একটু বেশিই লাফায়। বাড়তি বাউন্সের বিপক্ষে প্রস্তুতির সেই পুরনো ফর্মুলাই বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতেও ব্যবহার করবেন মিঠুনরা। সেই সঙ্গে বোলিং মেশিন তো থাকছেই, ‘ব্যবস্থা একটি তো করতেই হবে। ইংল্যান্ডের মতো উইকেট পাওয়া যাবে না যখন, তখন বিকল্প ব্যবস্থায় যেতেই হবে। এই ধরুন গ্রানাইট পাথরের স্ল্যাব কিংবা বোলিং মেশিনে বাড়তি বাউন্সের বল খেলার অনুশীলন করতে হবে।’
আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে গিয়ে কেমন উইকেট পাবেন, সে ধারণা নিউজিল্যান্ড থেকেই নিয়ে এসেছেন মিঠুন। জাতীয় দলের অন্যরা এর আগে একাধিকবার খেললেও তাঁর জন্য নিউজিল্যান্ড সফর ছিল এই প্রথম। অথচ প্রথম দুই ওয়ানডেতে অন্যদের তুলনায় সফল ছিলেন তিনি। টানা দুই ফিফটি করা এই ব্যাটসম্যানের ইনিংস আরো বড় করতে না পারা নিয়ে আছে আক্ষেপও, ‘কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কে থামতে চায় না। সবাই চায় তিন অঙ্কে যেতে। একটি ইনিংস ফিফটি পেরিয়ে শেষ হয়ে গেলে তা যথেষ্ট নয়। তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারলে দলের যেমন লাভ, তেমনি আমারও।’
সেই লাভের অঙ্কও বিশ্বকাপের আগেই মেলাতে চান মিঠুন, ‘চেষ্টা থাকবে যে ভুলগুলো করেছি, এরপর যাতে আর না হয়। শুধু বিশ্বকাপ নয়, এরপর যে ম্যাচ খেলব, সেই ম্যাচেই যেন ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। পরের ম্যাচেই যদি এখান থেকে বের হতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপে আরো ভালো করার সম্ভাবনা থাকবে। আমার লক্ষ্য সেটিই।’