ডলারের আধিপত্য কমাতে হলে রাশিয়া ও চীনের সামনে চ্যালেঞ্জ – পণ্য বিনিময়ে সব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য একক কোনো মুদ্রা বাছাই করা। এমনকি একাধিক মুদ্রার নতুন বিনিময় ব্যবস্থার কথাও ভাবছে এসব বিদ্রোহী শক্তি, যাতে আসন্ন আন্তর্জাতিক বিনিময় ব্যবস্থাটি একক কোনো দেশকে রাজনৈতিক আধিপত্যের সুযোগ করে না দেয়। পাশাপাশি ওই সব মুদ্রায় লেনদেনের জন্য নতুন আরেক বার্তা বিনিময় ব্যবস্থাও লাগবে, যা ‘সুইফট’-এর বিকল্প হবে। এ রকম সবকিছুর ভিত্তি হিসেবে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তির খসড়া তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন সার্গেই গ্লাজিয়েভ ২৭ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে। তবে সেই চুক্তির আগেই রাশিয়া ও চীন নিজেদের মধ্যে ইতিমধ্যে ‘সুইফট’-এর বিকল্প বার্তাব্যবস্থা কায়েম করে নিয়েছে এবং সেই ব্যবস্থায় আশপাশের অনেক দেশকে শামিল করতে তৎপর আছে। ভারত ইতিমধ্যে এসপিএফএস নামে পরিচিত রাশিয়ার ফিন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। ২০১৭ সাল থেকে লেনদেন চলতে থাকা এই ‘এসপিএফএস’ দ্রুত শামিল হতে চলেছে চীনের সিআইপিএসের (ক্রস বর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম) সঙ্গে। ডলারভিত্তিক আধিপত্যের জগৎ এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে চীন ও ভারতের লেনদেনব্যবস্থার সমন্বয়ের চেষ্টা এখন মোটেই আর আলোচনার টেবিলে আটকে নেই; বরং সেটা অনেক বাস্তব চেহারা নিচ্ছে।
ভারত ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রুশদের সঙ্গে ২০১৮ সালে চুক্তি হওয়া পাঁচ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নিচ্ছে রুপি-রুবল বিনিময়ব্যবস্থায়। অস্ত্র ছাড়াও সারের মতো জরুরি আমদানি পণ্যের সরবরাহ বাধামুক্ত রাখতেও রাশিয়ার সঙ্গে সুইফটের বিকল্প ব্যবস্থায় ঢুকতে হচ্ছে ভারতকে। বিশ্বজুড়ে এ রকম প্রবণতাগুলোরই মিলিত ফল হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক সেটেলমেন্টে (লেনদেন নিষ্পত্তিকরণ)’ ডলারের হিস্যা ইতিমধ্যে অনেক কমেছে বলেই তথ্য মিলছে।
এসবই নতুন এক বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ স্পষ্ট করছে। কারণ, তাতে ডলারের চাহিদা কমবে। ডলারকে এড়িয়ে নতুন ধারার লেনদেনগুলোও আপাদমস্তক পুঁজিতান্ত্রিক বিনিময় এবং তা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। পার্থক্য কেবল সেখানে ওয়াশিংটনের জায়গায় আধিপত্য করবে বেইজিং, মস্কো ও নয়াদিল্লি। উদীয়মান এই কাঠামোকে বলা যায় ‘তৃতীয় ব্রেটন উড।’ যেখানে ‘সার্ভিলেন্স’ একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করবে। আবার এর এমন একটা পার্শ্বফলও পাওয়া যেতে পারে, তৃতীয় বিশ্বের ধনীদের পাচার করা অর্থের পুরোনো গন্তব্যস্থল পাল্টে যাবে। এখনকার মতো সেগুলো আর কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ইত্যাদি অঞ্চলে ছুটবে না—অন্য কোনো জনপদ খুঁজে নেবে।
কিন্তু একই পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে এত অধিক তারকার সমাবেশ ওয়াশিংটনের পছন্দ হওয়ার কারণ নেই। ফলে সার্গেই গ্লাজিয়েভদের চিন্তাধারাকে রাশিয়া ও চীন যত জোরের সঙ্গে মদদ দিচ্ছে, ততইযুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুতিন ক্ষমার অযোগ্য এক প্রতিপক্ষ হয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচারমাধ্যমে স্পষ্টত এখন তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।