বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সড়ক দ্বীপের সামনে থেকে শুরু হয় বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক উৎসব মঙ্গল শোভাযাত্রা।
রজনীকান্ত সেনের গীতিকবিতার লাইন ‘নির্মল করো মঙ্গল করো মলিন মর্ম মুছায়ে’ মর্মবাণীকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি এলাকায় ভিড় জমায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে এসেছেন তারা। মেয়েরা পরনে বৈশাখি শাড়ি, খোপায় বেলিফুলের মালা আর ছেলেরা বাহারি রঙের পাঞ্জাবি পরে নাচেগানে উৎসবমুখর পরিবেশে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাংলা দিনপঞ্জিকার নতুন এই বছরকে বরণ করে নিতে সবচেয়ে বড় আয়োজন এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি টিএসসির সড়ক দ্বীপ থেকে শুরু হয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর ঘুরে ফের টিএসসি এসে শেষ হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, চারুকলা অনুষদের ডিন ও বৈশাখ উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক নিসার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীতে লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেপা পুতুল, ঘোড়া, মাছ, পাখি, মুখোশ, পেপার মাস্ক প্রদর্শনী করা হয়। বরাবরের মতো এবারও শোভাযাত্রার সকল উপাদান বানানোর কাজে নিয়োজিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আয়োজনের প্রস্তুতির দায়িত্বে ছিলেন চারুকলার ২২ ও ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বর্ষবরণ ও শোভাযাত্রার তহবিল সংগ্রহে সপ্তাহব্যাপী আর্ট ক্যাম্প করে অনুষদটির শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শোভাযাত্রাকে ঘিরে বুধবার রাত থেকেই টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। ক্যাম্পাস এলাকায় সীমিত করা হয় যান চলাচল।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘ দুই বছর পর পহেলা বৈশাখ প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসব ও আমেজের চিরাচরিত ছোঁয়া ফিরে পেয়েছে। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব। এটি একটি অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত উৎসব। এটি সকল জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের একটি প্রাণের জায়গা, সাধনার জায়গা, সম্পৃক্ততার জায়গা। ধর্ম যার যার সেটি থাকবে; কিন্তু উৎসব ও আমেজ সকলের। মানুষের মধ্যে ধর্মের সম্প্রীতি, মানবিক বন্ধন সুদৃঢ় হোক সেই প্রত্যাশা করি। ‘
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা দুই বছর আমাদের উৎসবটি করতে পারিনি। দুই বছর পর আমরা আবার আমাদের প্রাণে মেলা, হৃদয়ের উৎসবে হাজির হয়েছি। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যে শত্রুর বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি, সেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এই পহেলা বৈশাখ দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি আমাদের এই ঐতিহ্যময়ী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা জঙ্গিবাদ ও অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ‘