কত দীর্ঘ রাতের অপেক্ষা, কত হতাশা-আক্ষেপে পোড়া শেষে একটা ট্রফি। আর্জেন্টিনার হাতে একটা ট্রফি। বিশ্বসেরা লিওনেল মেসির হাতে একটা ট্রফি।
১৯৯৩ সালের পর ৭টি ফাইনালে হার। আর্জেন্টিনা জানে ক্ষতটা কতো বড়! একটা ট্রফির জন্য যার বিশ্বসেরার তকমায় ছেদ পড়ে, প্রশ্ন উঠে যায়, সেই লিওনেল মেসি জানেন এই ট্রফিটার মহাত্ম্য কত!
অবশেষে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই মারাকানায় এলো চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। সেই মারাকানা, যেখানে বিশ্বকাপের ফাইনাল হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো মেসিদের।
প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা। আক্রমণ ও বল দখলের লড়াইয়ে রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানায় সেলেসাওদের ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন এখন আর্জেন্টিনা। মারাকানায় ব্রাজিল সবশেষ ম্যাচ হারে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে। সেই ম্যাচটি এখনও ‘মারাকানা ট্র্যাজেডি’ নামে পরিচিত।
ডি মারিয়ার করা একমাত্র গোলে কোপা আমেরিকার ফাইনালে লিড নেয় লিওনেল মেসির দল। ম্যাচের শুরু থেকে ব্রাজিল পায়ে বল রেখে গোল দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ম্যাচের একমাত্র গোলটা দি মারিয়ার। ম্যাচের ২২ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। রদ্রিগো দি পলের লম্বা করে বাড়ানো পাস থেকে বলটি পান ডি মারিয়া। ডান প্রান্ত থেকে ছুটে গিয়ে ব্রাজিলের গোলরক্ষক মোরায়েসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। ২০০৪ সালে সিজার দেলগাদোর পর ডি মারিয়া প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার যিনি কোপার ফাইনালে গোল করলেন। পুরো ম্যাচের সারসংক্ষেপ ওই একটি গোলই। আর ওই এক গোলে ঘুচলো দীর্ঘ ২৮ বছরের আক্ষেপ।
এগিয়ে থাকলেও ব্রাজিল ছিল অনেকটাই যেন ছন্নছাড়া। প্রথমার্ধের ৫৪ শতাংশ সময় বল ছিল নেইমারদের পায়ে। গোলমুখে ৬টি শটও তারা নেয়, কিন্তু একটি সফল হয়নি। অন্যদিকে ব্রাজিলের গোলমুখে ৩টি শটের মধ্যে ১টি গোল পায় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই একের পর এক জোরালো আক্রমণ করতে থাকে ব্রাজিল, যার সুবাদে ম্যাচের ৫২ মিনিটেই পেয়ে যায় গোলের দুর্দান্ত একটি সুযোগ। ডি-বক্সের মধ্য থেকে সেটি কাজেও লাগান রিচার্লিসন। কিন্তু আক্রমণের শুরুতে তিনি অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল।
ম্যাচের ৫৫ মিনিটে মার্টিনিজের দারুণ নৈপুণ্যে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেনি বল। ৩ মিনিট পরে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের আরও একটি আক্রমণ প্রতিহত করেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। সেমিফাইনালের মতো এবারো আর্জেন্টিনাকে গোল থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
২০০৪, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ট্রফি নিজেদের করতে পারেননি মেসি। এবার আর ভুল করলেন না তারা, ব্রাজিল থেকেই ট্রফি নিয়ে ফিরলেন দেশে। সেই সঙ্গে কোপায় সবচেয়ে বেশি (১৫টি) শিরোপা জেতার রেকর্ডে উরুগুয়ের সঙ্গী হলো আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনাকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর চ্যাম্পিয়ন করার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি। পুরো আসরে ৪ গোল ও ৫ এসিস্ট করে দলকে পাইয়েছেন শিরোপা। ফাইনাল ম্যাচে গোল-এসিস্ট না পেলেও পুরো ম্যাচেই জয়ের জন্য মরিয়া ছিলেন মেসি।