আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের তেল কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করল তাঁর সরকার। মার্কিন অর্থ মন্ত্রকের ওই বিধিনিষেধের ফলে ইরান থেকে তেল কিনলে কোনও দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।
আমেরিকার অর্থসচিব স্কট বেসেন্টের অভিযোগ, ইরান সরকার তেল রফতানি থেকে পাওয়া অর্থ সামরিক পরমাণু কর্মসূচি, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নির্মাণ এবং জঙ্গিদের মদত দিতে ব্যবহার করছে। তা প্রতিহত করতেই এই পদক্ষেপ। ট্রাম্প সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে নয়াদিল্লি-তেহরান বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ,আমেরিকার অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, ভারত, চিন বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কোনও সংস্থা ইরান থেকে তেল কিনলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বাধিক চাপ’-এর নীতি পুনর্বহাল করার পথে হাঁটছে আমেরিকা। ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যদি ইরান তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে, তা হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রককে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের ছাড়পত্র দিতে একটি নির্দেশিকাও সই করেছিলেন তিনি। যদিও এর পরেই ইরানের বিরুদ্ধে ‘নিষেধাজ্ঞা নীতি’ নিয়েও দুঃখপ্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আশা করি, এই নিষেধাজ্ঞা বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না।’’ কিন্তু সপ্তাহ ঘোরার আগেই ব্যবহৃত হল সেই ছাড়পত্র।
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তিতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো বিপুল আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ। এই চুক্তির ফলে এক দিকে যেমন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া, তেমনই ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি ফিরে পেয়েছিল ইরানও।
২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া ইস্তক ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, ‘‘ওই চুক্তি ওবামার অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। এর ফলে আমেরিকার কোনও সুবিধা হয়নি। উল্টে লাভ হয়েছে ইরানের।’’ শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মে মাসে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি। তাই এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।’’ এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল আমেরিকা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে আবার কড়া তেহরান বিরোধী অবস্থান নিল ওয়াশিংটন।