বিশেষ প্রতিবেদক
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রিজেন্ট হাসপাতালে চুক্তি হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের এ বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলতে কার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে দ্বন্দ্ব কিংবা সমন্বয়হীনতায় বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ক্রমশ কমছে, আবার পরীক্ষিত নমুনা বিবেচনায় আক্রান্তের হার বেশি, যা অঙ্কের হিসাবে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই। করোনার চিকিৎসা, সংক্রমণ রোধ এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে সুসমন্বয় প্রতিষ্ঠা জরুরি।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও কার্যকর উদ্যোগের তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ল্যাবগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী পরীক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রেরণে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যকর ও দ্রুত উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি। ফি নির্ধারণের ফলে অনেক অসহায়, কর্মহীন, দরিদ্র মানুষ করোনার লক্ষণ দেখা দিলেও পরীক্ষা করাতে আসে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, অসহায় মানুষগুলোর সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় কেলেঙ্কারি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ যেমন উদ্বেগ বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বিদেশে দেশের ইমেজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; তাই এ ধরনের অপকর্ম নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো সমস্যা নেই। দুটিই সরকারের প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে কোভিড-১৯ দুর্যোগ মোকাবিলায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধিদফতরের দ্বন্দ্বের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে তার দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
পরীক্ষা না করেই করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়া ও করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল (উত্তরা ও মিরপুর শাখা) এবং জেকেজি হেলথকেয়ার নামক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মধ্যে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ শুরু হয়।
লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকা সত্ত্বেও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করা হয়- গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করোনা চিকিৎসার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজির এ বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। ১২ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের কাছে তার ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে ডিজি কী বুঝিয়েছেন- তা জানতে চাওয়া হয়।
এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধিদফতরের কোনো সমস্যা চলছে কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অধিদফতরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো সমস্যা নেই। জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে মন্ত্রণালয় থেকে অধিদফতরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এটি সরকারের প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজের একটি অংশ মাত্র। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সমস্যার কোনো ব্যাপার এটি নয়।