করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক জন্ম নিয়েছিল অতিমারির শুরু থেকেই। পিছনে পড়ে যাওয়া সেই বিতর্ক ফের সামনে টেনে আনলেন এক দল গবেষক। তাঁদের দাবি, বাতাসে ক্ষুদ্র কণা (ড্রপলেট)-র মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই যুক্তিতে ভর করে করোনা নিয়ে হু-এর যে নির্দেশিকা রয়েছে তা-ও বদলানোর দাবি তুলেছে বিজ্ঞানীদের ওই দলটি। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এখনই করোনাকে ‘বায়ুবাহিত’ রোগ বলতে নারাজ।
করোনা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এই দাবি তুলে কোভিড-১৯ নিয়ে হু-এর যে নির্দেশিকা রয়েছে তা বদলানোর দাবি তুলেছেন এক দল গবেষক। এর পক্ষে তাঁদের যুক্তি, করোনা রোগীর হাঁচি বা কাশির সঙ্গে বড় অথবা ছোট ড্রপলেট তীব্র গতিতে বাতাসে মিশে যায়। সেগুলি বাতাসে ভর দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারে। বাতাসে মিশে থাকা ওই ড্রপলেট শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গেলে কেউ করোনা সংক্রমিত হতে পারেন বলেই মনে করছেন ওই গবেষকরা। এই যুক্তি তুলে ধরে হু-কে একটি খোলা চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা। ২৩৯ জন বিজ্ঞানীর ওই গবেষণাপত্রটি পরবর্তী সপ্তাহে প্রকাশ করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রকাশিত হয়েছে ওই গবেষকদের বক্তব্য। আর তাতেই ফের করোনা বায়ুবাহিত কি না, তা নিয়ে পুরনো বিতর্কটা ফের সামনে চলে এসেছে।
দুশোর বেশি ওই গবেষক দলটির যুক্তি হু-এর কাছে নতুন নয়। কিন্তু হু এখনই করোনাকে বায়ুবাহিত রোগ বলতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত যে প্রমাণ হাতে এসেছে তা যথেষ্ট নয়। ততটা নির্ভরযোগ্যও নয়। আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটির সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ বিভাগের টেকনিক্যাল প্রধান বেনেডেট্টা অ্যালেগ্রাঞ্জি বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাসে আমরা বেশ কয়েক বার বলেছি যে, আমরা মেনে নিচ্ছি বাতাসের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবেই তার প্রমাণ এখনও ততটা জোরাল এবং স্পষ্ট নয়।’’
করোনা বায়ুবাহিত কি না এই বিতর্ককে কিছুটা অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। তাঁর স্পষ্ট ব্যাখ্যা, ‘‘করোনা বায়ুবাহিত হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ত। লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ আটকে রাখা যেত না। তা হলে রাস্তায় বার হলেই করোনা হত। গবেষকদের একাংশের এই মত এখনই মেনে নিতে পারছি না।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘করোনা বায়ুবাহিত কি না, তা খুব জোর গলায় বলতে হলে আরও গবেষণা এবং পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।’’