ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া, এমনই অভিযোগ তুলল আমেরিকা। তাদের বিদেশ দফতরের দাবি, যুদ্ধক্ষেত্রে ‘ক্লোরোপিকরিন’ নামে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। এটি প্রতিপক্ষের সেনার শ্বাসরোধ করে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। ক্রেমলিন সমস্ত অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আমেরিকার দাবিকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না ইউরোপ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ আজ হুমকির সুরেই বলেছেন, ‘‘রাশিয়া যদি গায়ের জোর দেখায় এবং ইউক্রেন যদি অনুরোধ করে, তা হলে ফ্রান্স তাদের স্থলবাহিনী নামিয়ে দেবে।’’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ মস্কোয় সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ‘কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন’ (সিডব্লিউসি) মেনে চলছে। ১৯৩টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছিল। সব দেশ এই নিয়ম মানছে কি না, তা দেখার জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা রয়েছে— ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপনস’(ওপিসিডব্লিউ)। আমেরিকা যে রাসায়নিকটির নাম তুলেছে, সেই ‘ক্লোরোপিকরিন’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি একটি তৈলাক্ত পদার্থ। এটি শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুস, চোখ, ত্বকে প্রদাহ শুরু করে। বমি শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ডায়েরিয়া, মাথা ঘোরা। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করতে রাশিয়া এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ। সিডব্লিউসি অনুযায়ী যুদ্ধে ক্লোরোপিকরিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ওপিসিডব্লিউ-এর তালিকায় এটি ‘চোকিং এজেন্ট’ হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে। আমেরিকার বিদেশ দফতরের দাবি, মস্কো নিয়মিত ভাবে এই এজেন্টটি যুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এ ছাড়াও ‘রায়ট কন্ট্রোল এজেন্টস’ বা কাঁদানে গ্যাস ছড়িয়েছে।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা নিয়ে যুদ্ধে গোড়া থেকেই রাশিয়াকে সতর্ক করে আসছে আমেরিকা। যুদ্ধ শুরুর পরপরই ২০২২-এর মার্চ মাসে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘‘রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে দাম চোকাতে হবে রাশিয়াকে। ওরা যেমন কাজ করবে, তেমন ব্যবহার পাবে।’’ আমেরিকার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ম্যালোরি স্টুয়ার্টের দাবি, মস্কো কখনওই নিয়ম মানেনি। তারা নানা ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করেছে। এ বছর গোড়ার দিকে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের রিপোর্টে দাবি করেছিল, রুশ বাহিনী সিএস এবং সিএন কাঁদানে গ্যাসভর্তি গ্রেনেড ছুড়েছিল। বিষাক্ত গ্যাস কমপক্ষে ৫০০ ইউক্রেনীয় সেনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুও ঘটেছিল।
রাশিয়ার কাছে রাসায়নিক অস্ত্রের ভান্ডার থাকার অভিযোগ নতুন নয়।২০১৭ সালে ওপিসিডব্লিউ জানায়, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকে মজুত থাকা বিপুল অস্ত্র নষ্ট করে দিয়েছে রাশিয়া। ২০১৭ সালে প্রাক্তন সোভিয়েত গোয়েন্দা কর্তার উপর ‘স্যালিসবারি অ্যাটাকের’ অভিযোগ ওঠে মস্কোর বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে তৎকালীন রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির উপর নার্ভ এজেন্ট ব্যবহারেরও অভিযোগ ওঠে।