রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ আজ রোববার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অর্থাৎ তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আরও ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত তাপ প্রবাহের এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়।
১৯ এপ্রিল প্রথমবার সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরে আরও দুই দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়।
দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পরিবেশ এখনও যেন উত্তপ্ত উনুন হয়ে আছে।
গতকাল চুয়াডাঙ্গায় পারদ ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; যা এ মৌসুমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এদিন রাজধানী ঢাকায় ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গত শুক্রবার মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল চুয়াডাঙ্গায়। আর ঢাকায় ছিল ৩৮ দশমিক ২।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, ২ মে’র দিকে বৃষ্টি হতে পারে। এটি কয়েক দিন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন তাপমাত্রা কমবে।
এদিকে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে কক্সবাজারে এক পর্যটকসহ আরও ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের প্রথম চার মাসে স্বাভাবিক যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা, এবার তার চেয়ে কম হয়েছে। এ কারণে এপ্রিল মাসজুড়ে প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা চলছে।
আগামী ২ মে থেকে কয়েক দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও ওই মাসেও গরম সহ্য করতে হবে মানুষকে। তবে খানিকটা স্বস্তি ফিরতে পারে মে মাসের শেষ দিকে। সে সময় কালবৈশাখী আর থেমে থেমে বৃষ্টিতে উষ্ণতা কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদের ভাষ্য, গত বছর বাতাসে আর্দ্রতা কম ছিল। এবার আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে শরীর ঘামছে ও অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। এবার বৃষ্টি কম। কালবৈশাখী এবং বৃষ্টি না থাকার কারণে এবার গরমের তীব্রতা বেশি।
তিনি বলেন, ‘মে মাসজুড়ে ঝড়বৃষ্টি বেড়ে কিছুদিন গরম কমবে। তবে বৃষ্টি কমলে আবার শুরু হবে গরম। এভাবেই মে মাস চলবে। বর্তমান তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন এ রকমই থাকবে। কাল (আজ) কিছুটা বাড়তেও পারে। এরপর ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। ২ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হবে। এই সময় ঢাকায়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।বাংলাদেশে মে মাসেও গরমের দাপট যে বেশি থাকে, সে কথা মনে করিয়ে দেন ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সমরেন্দ্র কর্মকার। ১৯৭২ সালে মে মাসেই বাংলাদেশে রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বলে জানান তিনি।