দেশের উচ্চ করহার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)। সংঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর বলেন, দেশে উচ্চ করহার স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ব্যবসা উদ্যোগ পরিচালনায় উত্সাহিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে এক মধ্যাহ্নভোজ সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। আগামী জুনে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। বাজেটকে সামনে রেখে গতকালের সভায় ব্যবসায়ী নেতারা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা আয়কর ও ভ্যাটের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সমস্যা নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এসময় দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার অসঙ্গতিকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন।
নিহাদ কবীর বলেন, দেশের বেশিরভাগ কোম্পানির জন্য কর্পোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে লভ্যাংশের উপর ২০ শতাংশ হার কর দিতে হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী কর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা নিশ্চিত থাকতে চান, আগামী পাঁচ বছরে এই এই হারে কর থাকবে। এর ভিত্তিতে তাদের বিনিয়োগে লাভ-লোকসানের হিসাব করে বিনিয়োগে আসা কিংবা না আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এ সময় নতুন ভ্যাট আইনে কী ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে, তা এখনো ব্যবসায়ীদের কাছে পরিষ্কার নয় জানিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান এমসিসিআই সভাপতি। লিখিত বক্তব্যে নতুন করে করদাতা খুঁজতে গিয়ে বাড়ি বাড়ি এনবিআর কর্মকর্তাদের হাজির হওয়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মহল এর সুবিধা নিতে পারে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি রপ্তানিমুখী চামড়াজাত শিল্পের প্রতিনিধি বিদেশি বিনিয়োগ না আসার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়ার পর গত পাঁচ বছর ধরে তা ঝুলে আছে। ওই বিদেশি বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করেছেন। কারণ ভিয়েতনামে লভ্যাংশের উপর কর নেই। কিন্তু এখনো উচ্চ হারে কর আরোপ করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা উচ্চ হারে অগ্রিম আয়কর কর্তন করা ও কর্তিত আয়কর পরবর্তী সময়ে সমন্বয়ে কর কর্তৃপক্ষের অবহেলাসহ বেশকিছু সমস্যা তুলে ধরে তা সমাধানে এনবিআর চেয়ারম্যনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান কর আদায় বাড়াতে চাপে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, দ্বিমুখী চাপে আছি। কম হারে কর আদায় করতে চাই। কিন্তু প্রতিবছর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া থাকে। চলতি অর্থবছর গতবারের চেয়ে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ বেশি হারে আদায় করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজস্ব লাগবে। তবে অন্যায়ভাবে কারো কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাবে না। এ পরিস্থিতিতে চাপ না দিয়ে কীভাবে বাড়তি রাজস্ব আদায় করা যায়, তার উপায় বের করে দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
অবশ্য আগামী বাজেটও বিনিয়োগবান্ধব হওয়ার আশ্বাস দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপেরও ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, বন্ডেড সুবিধার মালামাল বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এটি বন্ধ না হলে দেশতো ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে হবে। এ সময় নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এতে এমন কিছু আসবে না যাতে আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় আছে। তবে এটি কার্যকর হলে ভ্যাট আদায় কমে যাবে বলে বলা হচ্ছে। সে বিষয়ে মনযোগ দেব।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলীহুসেন আকবর আলী, আদিব এইচ খান প্রমুখ।