অপ্রত্যাশিত মৃত্যু। কয়েকশো জল্পনা ও হাজারো প্রশ্ন… রবিবার বান্দ্রার নিজের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত। সোমবার ভিলে পার্লের একটি শ্মশানে তাঁকে দাহ করা হয়। এই দু’দিনে কোনও পোস্ট না করলেও মঙ্গলবার সকালে সুশান্তের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর প্রথম প্রেমিকা ও ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিকের সহ-শিল্পী অঙ্কিতা লোখন্ডে। ওই ধারাবাহিকের আর এক শিল্পী প্রার্থনা বেহরে জানিয়েছেন, সুশান্তের মৃত্যুসংবাদ শোনামাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন অঙ্কিতা। ও খুব আবেগপ্রবণ। তবে সুশান্তের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছে বছর চারেক। অঙ্কিতাও এখন একটি সম্পর্কে আছেন। তাই অঙ্কিতা সামলে উঠতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন।
দুপুরে সুশান্তকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট করেন কৃতী শ্যানন। সোমবার অভিনেতার শেষ যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। কৃতী পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সুশ, আমি ভালমতো জানতাম, ক্ষুরধার মন তোমার প্রিয় বন্ধু আবার সবচেয়ে বড় শত্রুও… আমি যদি তোমার ভেঙে যাওয়া মনটাকে জোড়া দিতে পারতাম… তোমাকে যারা ভালবাসত, তাদের যদি তুমি দূরে না সরিয়ে দিতে…’’ পোস্টেই স্পষ্ট, আক্ষেপে মিশে বিরহ বেদনাও।
সুশান্তের আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে বলিউড এখন দ্বিধাবিভক্ত। গত কয়েক বছর ধরেই যে নেপোটিজ়ম বা স্বজনপোষণের বিতর্ক সময়ে সময়ে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল, তা আরও এক বার চর্চার কেন্দ্রে। বড় পর্দায় ব্যোমকেশ বক্সীরূপে সুশান্তকে হাজির করেছিলেন পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্য মেধার, চেষ্টাহীন, সুবিধাভোগী অভিনেতাদের চেয়ে ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে আসা একজনকে দ্বিগুণ বেশি পরিশ্রম, প্রতিভা এবং এনার্জি দেখাতে হয়। বক্স অফিস এবং দর্শকের কাছে প্রমাণ করতে হয় যে, তার উপরে বাজি ধরা যায়।’’ সুশান্ত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কাজের প্রতি ওর নিষ্ঠা দেখার মতো। শুটের আগের রাতেই লাইন মুখস্থ করে, নিজের মতো নোটস বানিয়ে ও তৈরি থাকত। আর সব সময়ে ওর সঙ্গে দু’-একখানা বই থাকত। ইন্ডাস্ট্রির ঠুনকো গ্ল্যামারের বাইরেও যে ও নিজের বুদ্ধিচর্চার দুনিয়াটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, তা নিয়ে ওর গর্বও ছিল।’’
এ দিন মুখ খুলেছেন সুশান্তের আগামী ছবির পরিচালক রুমি জাফরিও। কেরিয়ারের শুরুর দিকে রুমির সঙ্গে থিয়েটারও করেছেন সুশান্ত। মে মাসেই তাঁদের একটি রোম্যান্টিক কমেডির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। যে ছবিতে সুশান্তের বিপরীতে কাজ করার কথা ছিল তাঁর রিয়্যাল লাইফ প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে। রুমি বলেছেন, ‘‘গত এক বছরে সুশান্ত প্রায়ই আমার বাড়িতে আসত। আমার পরিবারের সঙ্গে চেনা হয়ে গিয়েছিল। ওর অবসাদের কথা জানতাম। কিন্তু তা নিয়ে কথা বলতাম না। কারণ সামনে ও হাসিখুশিই থাকত।’’
সুশান্তের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে রিলিজ়ের কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে টুইটারে ছবির হল রিলিজ়ের দাবি উঠেছে। সুশান্তের মৃত্যুসংবাদ মানতে না পেরে মারা গিয়েছেন তাঁর এক তুতো বৌদি। মঙ্গলবার অভিনেতার এক অনুরাগীও আত্মহত্যা করেছেন। অনুরাগীদের মনেই বেঁচে থাকুন স্বপ্নবিভোর ছিছোরে।