The news is by your side.

হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলা, জেএমবি নেতা নূর গ্রেফতার

0 86

বহুমাত্রিক লেখক, কবি ও  ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডক্টর হুমায়ুন আজাদ  হত্যা প্রচেষ্টা মামলার মূল আসামি  জেএমবি নেতা  নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এটিইউর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া জুঁই জানান, সোমবার রাতে তাকে ধরা হয়েছে। জেএমবি নেতা নূর মোহাম্মদ চাপাতি দিয়ে সরাসরি অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ঘাড়ে-গলায় কুপিয়ে রক্তাক্ত ও জখম অবস্থায় মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অধ্যাপক আজাদ জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য,২০০৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মাঝামাঝি পৌঁছালে জঙ্গিরা হুমায়ুন আজাদকে ঘেরাও করে। ব্যাগ থেকে চাপাতি-ছুরি বের করে হুমায়ুন আজাদের ঘাড়, মাথা, মুখ, গলা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। এরপর হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে সাধারণ লোকজনের সঙ্গে মিশে যায়। একপর্যায়ে ‘সরকার নারী’ (১৯৯২), ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ (২০০১), ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ (২০০৩) গ্রন্থ তিনটিকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।

চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন আজাদ প্রথমে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও পরে থাইল্যান্ডে যান। জীবন রক্ষা পেলেও তিনি অনেকটা পঙ্গু হয়ে যান। এরপর জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা কাজ করার জন্য জার্মানির লেখকদের সংগঠন পেন ক্লাবের বৃত্তি নিয়ে ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট মিউনিখ গিয়ে পৌঁছান।

এ মামলার কিছু কথা

ঢাকার আদালতে বহুমাত্রিক লেখক ও অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০০৪ সালে ফৌজদারি আইনে একটি হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে অন্য একটি মামলা করা হয়েছিল। হত্যা মামলায় ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে আক্রান্ত হন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, যিনি তার লেখনীর জন্য আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হুমকি পেয়ে আসছিলেন। তখন তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। তিনি ২২ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সবশেষ জার্মানির মিউনিখে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান। হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর ওই মামলাটি আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। একই ঘটনায় হত্যা মামলার পাশাপাশি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনেও মামলা হয়। দুটো মামলার বিচারই থমকে আছে। যদিও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বাধাগ্রস্ত করেছিল প্রতিটি পদে পদে বলে জানা যায়।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে হত্যা এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে আলাদা দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান।

এ মামলার আসামিরা হলেন- জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু ওরফে শামীম। এর মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। তারা দু’জনই ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সালাহউদ্দিন ও নুর মোহাম্মদ পলাতক। পরে সালাহউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেফতার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আলোচিত এ মামলায় প্রথমে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেও আসামি করা হয়। পরে তার নাম বাদ দেয়া হয়। অবশেষে নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু ওরফে শামীমকে গ্রেফতার হলো।

 

 

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.