The news is by your side.

বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে: শিগগিরই পদক্ষেপ

0 523

 

 

এবার সারা দেশকে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের আওতায় না এনে যেসব বড় শহরে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক সেগুলোয় কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দুই-তিন দিনের মধ্যে নির্দেশনা জারি হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গত সোমবার এ নিয়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের একটি জরুরি সভাও হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত সোমবার জরুরি ভিত্তিতে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক,  স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

জানা গেছে, দেশ এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে বলে অনেকেই বৈঠকে মত দিয়েছেন। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে চলার বিকল্প নেই। বড় শহরগুলোতেই যেহেতু আক্রান্তের হার বেশি, তাই প্রথমেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরকে নতুন করে নিয়ন্ত্রণের আওতায় এনে প্রয়োজনে লকডাউনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে গত ৩০ মে থেকে সব কিছু খুলে দেওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সরকার বেশ অস্বস্তিতে আছে। প্রতিদিনই সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে তার মধ্যে  সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এ তিন শহর নিয়েই সরকার উদ্বিগ্ন। সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে মেয়রদের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় কী সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাবে মেয়ররা প্রত্যেক সিটি করপোরেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দাবি তুলে ধরেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তিনটি বিষয়ে একই দাবি জানিয়েছেন। তিন দাবির একটি হচ্ছে, এই চার সিটিতে যাতে অন্য জেলার মানুষ আসা-যাওয়া না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রত্যেক সিটি এলাকায় আলাদাভাবে ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মানুষ সহজে টেস্ট করাতে পারে এবং ফলাফল দ্রুত পায়।

মেয়রদের এসব দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। মেয়রদের বলা হয়েছে, বৈঠকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি ভেবেচিনতে সুপারিশমালা তৈরি করবে। কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে দুই-তিন দিনের মধ্যে মেয়রদের জানানো হবে। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের দুজন মেয়র বলেছেন, ঈদের আগে গার্মেন্ট কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। ঈদের আগে গার্মেন্ট না খুলে দিয়ে ঈদের পর অন্তত ১০-১৫ দিন পর্যন্ত টানা ছুটি বৃদ্ধি করলে বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকির দিকে যেত না। তারা আরও বলেছেন, সরকার সবকিছুই করছেন, কিন্তু এই বৈঠকটি যদি ছুটি বাতিলের আগে মেয়রদের নিয়ে করা হতো তাহলে ভালো হতো। সূত্র জানায়,  বৈঠকে একাধিক জনপ্রতিনিধি এমন মতামতও দিয়েছেন যে, এখনো ১৫ থেকে ৩০ দিনের কড়া লকডাউন বলবৎ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সূত্র আরও জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এই সময়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত আন্তর্জাতিকভাবে যেসব নিয়ম-কানুন দেওয়া হয়েছে তা পালন করার বিকল্প নেই। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কয়েক কোটি মানুষের বাস। আন্তজেলার পরিবহন বন্ধ না করে এই তিন সিটিতে কীভাবে সংক্রমণ রোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওয়ার্ডভিত্তিক রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করা হতে পারে। অবশ্য বৈঠকে মেয়ররা জানতে চেয়েছেন, জোন কীভাবে ভাগ করা হবে। তখন সম্ভাব্য একটি রূপরেখা দিয়ে বলা হয়েছে, যারা করোনা আক্রান্তের টেস্ট দিচ্ছেন সেখানে ওই ব্যক্তির সব তথ্য থাকে। টেস্টে যারা পজিটিভ হবেন তাদের তথ্য রোগী নিজে জানার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার বা চেয়ারম্যানদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন ওয়ার্ডভিত্তিক রোগীর সংখ্যা হিসাব করে জোন ঠিক করা হবে। যেসব এলাকায় রোগী বৃদ্ধির হার দ্রুত তা হবে রেড জোন হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান,  কাদের স্বার্থে গার্মেন্ট খোলা হয়েছিল, কাদের পরামর্শে ঈদের পর তড়িঘড়ি করে সব খুলে দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের বিপক্ষে গেছে। এই বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান খান গতকাল বলেন, সোমবারের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন। তারা উচ্চ ঝুঁকির শহরগুলোর বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্তের হিসাব অনুযায়ী জোনভিত্তিক চিত্র পর্যালোচনা করছেন। শিগগিরই তাদের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.