The news is by your side.

হিন্দুর ওপর অত্যাচার হলে মুসলমান প্রতিবাদ করবে, মুসলমানের ওপর হলে হিন্দু করবে প্রতিবাদ , এই সহমর্মিতাই পৃথিবীকে সুন্দর করবে

0 584

 

 

 

তসলিমা নাসরিন

ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মানুষ আমেরিকায়। সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে আমেরিকায়। অথচ এই আমেরিকায় করোনাভাইরাসের ভয় ডর উড়িয়ে দিয়ে হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। লকডাউন মানছে না, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানছে না।

ভাইরাসে মরতে হয় মরবে কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদ করতেই হবে, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেই হবে। জর্জ ফ্লয়েড লোকটি কালো, কোনও একটি দোকানে কিছু কিনতে গিয়ে জাল ২০ টাকার নোট দিয়েছিল বলে দোকানিরা পুলিশ কল করে, পুলিশ এসে হাতকড়া পরিয়ে জর্জকে নিয়ে যায়। এটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু পুলিশের এক লোক হঠাৎ হাতকড়া পরা জর্জকে মাটিতে শুইয়ে তার গলা পিষতে থাকে হাঁটু দিয়ে।

পুলিশের অন্য লোকগুলো দেখে গেছে শুধু, জর্জকে বাঁচাবার চেষ্টা করেনি। ভিডিওতে হত্যার নির্মম দৃশ্যটি দেখার পরও পুলিশগুলোকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রতিবাদ হচ্ছে দেখে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু থার্ড ডিগ্রি মার্ডারের জন্য । থার্ড ডিগ্রি, এর মানে হত্যা করার উদ্দেশে পুলিশের লোকটি জর্জের ঘাড়ের ওপর বসে থাকেনি!!

জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পুলিশ, তার বিরুদ্ধে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব শ্রেণীর মানুষ আজ রুখে উঠেছে। বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে আজ আমেরিকা। তবে যারা বেরিয়েছে ঘর থেকে, সবাই প্রতিবাদের উদ্দেশে বের হয়নি। কেউ কেউ বেরিয়েছে ভায়োলেন্স করতে, কেউ কেউ বেরিয়েছে দোকানপাট লুঠ করতে।

যে কোনও আন্দোলনেই এমন কিছু অসৎ লোক থাকেই, যারা মিছিলে যায় না, যারা মূলত দোকানপাট লুঠ করতে যায়। এদিকে কিছু মিডিয়া শুধু ভাংচুর,আর জ্বালানো পোড়ানোর কথাই বলছে, ,লুঠের কথাই বলছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলগুলোর কথা বলছে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে শেষ অবধি অন্যায় বলে প্রমাণ করার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাম হও, ডান হও, সাদা হও, কালো হও, সবচেয়ে বড় কাজ এই মুহূর্তে নিরপেক্ষা থাকা।

আমেরিকায় বর্ণবাদ আগের চেয়ে অনেক কম, এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আগের চেয়ে অনেক বেশি। যে কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিবাদ না হলে সমাজে অন্যায়গুলোই খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। তখন অন্যায়গুলোকে আর অন্যায় বলে মনে হয় না। এই যে প্রতিবাদ হচ্ছে আমেরিকায়, জ্বালানো পোড়ানো আর লুঠের ঘটনা বাদ দিলে এ প্রতিবাদ অত্যন্ত জরুরি প্রতিবাদ।

মিছিলে বা শহরে শহরে পুলিশের সংগে সংঘর্ষে গত দুদিনের যে চিত্রটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তা হলো সাদাদের উপস্থিতি। শুধু কালো নয়, সাদারাও প্রতিবাদ করছে, তাদের হাতেও প্ল্যাকার্ড, তারাও স্লোগান দিচ্ছে, পুলিশের সংগে সংঘর্ষে তারাও যাচ্ছে। আসলে সত্যি বলতে, অধিকাংশ মিছিলে কালোর চেয়ে সাদার সংখ্যাই বেশি।

কালোদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ঘোচানোর জন্য যে সাদারা করোনার ঝুঁকি নিয়ে আজ আন্দোলন করছে, তাদের জন্যই এই পৃথিবীটা সুন্দর। আসলে ইউরোপ আর আমেরিকার সমাজে বর্ণবাদ যেমন সাদারা এনেছে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আইন জারি করা, সমাজ থেকে একে দূর করার আন্দোলন সাদারাই করেছে। সংখ্যালঘুরা একা আন্দোলন করলে কোনও ফল পেতো না।

ভারতীয় উপমহাদেশে এরকম দৃশ্যই দেখতে চাই। হিন্দুর ওপর অত্যাচার হলে মুসলমান প্রতিবাদ করবে, মুসলমানের ওপর হলে হিন্দু করবে প্রতিবাদ। এই সহযোগিতা, এই সহমর্মিতাই পৃথিবীকে সুন্দর করবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.