রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ এখনও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট মর্গেই রাখা আছে। পরিচয় নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ডিএনএ পরীক্ষার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী লাশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।
নিহত ওই সাংবাদিককে নিজের মেয়ে বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সাবরুল আলম সবুজ। লাশ নিতে তিনি মর্গে এসেছেন। তবে তাকে নিজের মেয়ে দাবি করলেও সবুজ যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এনেছেন, তাতে নাম ‘বৃষ্টি খাতুন’, বাবার নাম ‘সবুজ শেখ’ এবং মায়ের নাম ‘বিউটি বেগম’ লেখা। কিন্তু নিহত সাংবাদিক পেশাগত জীবনে ও লেখালেখির জগতে নিজেকে ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত রমনা থানার এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাশ এবং বাবা পরিচয়দানকারী সাবরুল আলম সবুজের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে–ডিএনএ না মিললে এবং অভিশ্রুতি পালিত সন্তান হয়ে থাকলে, তার দাফন বা সৎকারের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই হাবিবুর বলেন, তিনি যে পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, আমার ধারণা আদালত তাকে সেই পরিবারের কাছেই হস্তান্তর করবেন।
খোকসার বনগ্রামে গুজব উঠেছিল, অভিশ্রুতির লাশ গ্রামে এলে জানাজা পড়ানো যাবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করেছে খোকসা থানা। তবে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন জানিয়েছেন, সবুজের মেয়ের লাশ নিয়ে ফিরলে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জানাজা পড়ানো ও দাফন সম্পন্ন করা হবে।
বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি আমার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে সে এসএসসি পাস করে। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে ইডেন কলেজে ভর্তি হয়। সম্প্রতি আমার ছেলেকে ঢাকায় ভর্তির ব্যাপারে বৃষ্টি সহায়তা করে।
স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষক মিনা পারভীন বলেন, বৃষ্টি প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করেছে।
ব্র্যাক স্কুলে বৃষ্টি তার সহপাঠী ছিলেন বলে জানান একই গ্রামের শারমিন। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে পড়েছি। মাসখানেক আগেও ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। ও হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে, তা আমাকে কখনও বলেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অভিশ্রুতির বন্ধু আব্দুল মোমিন বলেন, ওর পরিচয় নিয়ে অনলাইনে যেসব বিরূপ কথাবার্তা লেখা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যে পরিবারে বেড়ে উঠেছে মরদেহ তাদের কাছেই হস্তান্তর করা উচিত। মানুষ হিসেবে ও খুব মিশুক ছিল। সবার সঙ্গে অল্প সময়ের কথাবার্তায় আপন হয়ে যেত। আর লেখালেখিতে খুব আগ্রহী ছিল সে। ব্লগে লিখত। অসুস্থ হওয়ার পর লেখালেখিতে ভাটা পড়ে।