অর্থনীতির চালচিত্র: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বায়ন থেকে চীনকেন্দ্রিক বিশ্বায়ন!
বলতে গেলে বিশ্ব আজ অবরুদ্ধ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা, স্থবির অর্থনীতির চাকা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায় না, যেতে পারেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া নিষেধ। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন। তবে এটিই শেষ কথা নয়। করোনার এই পরিস্থিতি থেকে একদিন মুক্তি পাবে পৃথিবী। তখন কেমন হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র? অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষক শুনিয়েছেন আশার কথা, ভয়াবহ এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে চিরতরে বদলে দেবে। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও।
ইতিমধ্যে শুরু হয়ে যাওয়া একটি পরিবর্তনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোভিড–১৯ মহামারি। সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বায়ন থেকে চীনকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের দিকে আরও সরে যাওয়া। প্রশ্ন হলো, কেন এই ধারা অব্যাহত থাকবে? মার্কিন জনগণ বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলো বিষাক্ত, তা সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেই হোক বা না হোক। অন্যদিকে চীন এই বিশ্বাস হারায়নি। কেন? খুবই গভীর একটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। চীনা নেতারা এখন ভালো করেই জানেন, ১৮৪২ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তাদের জন্য ছিল অপমানজনক একটি শতাব্দী, যা ছিল নিজেদের আত্মতুষ্টি ও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাঁদের নিরর্থক প্রচেষ্টার ফল। এর বিপরীতে গত কয়েক দশকের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বিশ্বব্যাপী ব্যস্ততার ফল ছিল। চীনা জনগণ তাদের সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বাড়িয়েছে।
তারা বিশ্বাস করে, যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম তারা। ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখন দুটি উপায় আছে। যদি তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখা হয়, তবে তাদের চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি জিরো–সাম ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। যাতে এক পক্ষ জিতবে, অন্য পক্ষ নিঃশেষ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য যদি হয় মার্কিন জনগণের ভালো দেখা, তাহলে যাদের সামাজিক অবস্থার ইতিমধ্যে বেশ অবনতি হয়েছে, তাদের চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। বিজ্ঞরা বলেন, এটাই ভালো হবে। তবে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিষাক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে বুদ্ধিমানের এই পরামর্শ হয়তো ধোপে টিকবে না।