মৃত্যু রোধ এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক শুরু হলো করোনা রোগীদের ‘প্লাজমা থেরাপি’ কার্যক্রম। প্রাথমিকভাবে প্লাজমা সংগ্রহ করে প্রয়োগ করা হবে গুরুতর অসুস্থদের।
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে করোনাজয়ী তিনজন চিকিৎসকের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৫ জন গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর ওপর ‘প্লাজমা থেরাপি’ প্রয়োগ করা হবে।
এ ছাড়া ঢাকার আরও দু-একটা হাসপাতালে রোগীদের ওপর এই থেরাপি প্রয়োগের পরিকল্পনা আছে। চীন, আমেরিকাসহ অন্যান্য অনেক দেশে ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির সফলতা প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ খান বলেন, এটি একটি পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশেষ করে যখন কোনো রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই এবং সুস্পষ্ট কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাও নেই। সে ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর ও পরীক্ষিত চিকিৎসা পদ্ধতি।
তিনি বলেন, চীনে এই থেরাপি ব্যবহারের প্রথমদিকে ১০ জন অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে এটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে তারা সবাই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। অপরদিকে একই সময় অন্য দশজন অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্লাজমা না দিয়ে প্রথাগত চিকিৎসা দেয়ায় তাদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। তাই করোনা চিকিৎসায় এর সফলতা প্রমাণিত।
এ কারণে গত ৩ এপ্রিল ইউএসএফডিএ এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। অধ্যাপক খান বলেন, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত নীতিগত অনুমোদন নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সেন্টার হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমাদের ক্রাইটেরিয়ামতো রোগী পাওয়া গেলে তাদের ওখানেও করতে পারি। কিছু ডোনার আমাদের হাতে আছে। যারা ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন, তাদের আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রোগী দিন দিনই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৬৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৮৩ জন। রোগী বাড়তে থাকায় চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।এরই অংশ হিসেবে প্লাজমা থেরাপি দেয়া শুরু হচ্ছে।
জানা গেছে, কোভিড মহামারীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে গত ২৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগে একটি প্রটোকল প্রণয়ন করেছে। যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিএমআরসিতে জমা দেয়া হয়েছে।
দেশে প্রাথমিকভাবে ৪৫ জন কোভিড আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্লাজমা প্রয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে অপর ৪৫ জনকে প্লাজমা ছাড়া অন্য চিকিৎসা দেয়া হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যাবে। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশে মুমূর্ষু রোগীদের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হবে।
আপাতত ঢাকা মেডিকেলের নিজস্ব খরচে পরীক্ষামূলক পর্যায় শুরু করা হলেও বড় আকারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে সরকারের সহায়তা লাগবে বলে জানান ডা. এমএ খান।
তিনি বলেন, প্লাজমা সংগ্রহের কিট আমাদের হাতে অল্প কয়েকটা আছে। আমরা চাইলেই ডোনারের কাছ থেকে কিটের খরচ নিতে পারি না। আর রোগীরাও এই খরচ দেবে না। এ জন্য সরকারকে এগুলো সরবরাহ করতে হবে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বলে রোগীকে প্লাজমা থেরাপি দেয়ার পর আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। কিছু পরীক্ষা ঢাকা মেডিকেলে হয়, কিছু পরীক্ষা বাইরে করাতে হবে।