রাশিয়ার শীর্ষ বিরোধী নেতা ও পুতিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনির জীবনের ওপর বানানো একটি ডকুমেন্টারি জিতেছিল অস্কার। চার বছর আগে যখন তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যাচেষ্টা করা হয় সেই ঘটনা নিয়েই ডকুমেন্টারি।
ডকুমেন্টারির নাম ছিল ‘নাভালনি’।
২০২২ সালের অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারির কানাডিয়ান পরিচালক ড্যানিয়েল রোহার নাভালনির কাছে জানতে চান, ‘আপনি যদি নিহত হন, যদি এমনটা আপনার সঙ্গে কখনো ঘটে, তবে আপনি রাশিয়ার জনগণের কাছে কী বার্তা রেখে যেতে চান?’
প্রশ্ন শুনে হেসে নাভালনি বলেছিলেন, ‘আরে ধুর ড্যানিয়েল। মনে হচ্ছে আমাকে হত্যা করা হবে সেটি ধরে নিয়েই তুমি সিনেমা বানাচ্ছো।’
তবে এমনটি যে বাস্তবেই ঘটবে তা হয়তো তখনও কেউ ভাবতে পারেনি। শুক্রবার আর্কটিক সার্কেল কারাগারে থাকাকালীন মারা যান ৪৭ বছর বয়সী রুশ রাজনৈতিক কর্মী। তার মৃত্যুর পর সেই কথোপকথনগুলো নতুন মর্মস্পর্শীতা পেয়েছে।
রাশিয়ার কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নাভালনি হাঁটার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
নাভালনির দল বলেছে, তার মৃতদেহটি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রেখেছে যাতে তারা ‘প্রমাণ ঢাকতে’ পারে।
নাভালনি রাশিয়ায় স্পষ্ট বিপদের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও রোহের বিবিসিকে বলেন, যখন তিনি তার বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনেছিলেন তখনও তিনি মর্মাহত ছিলেন।
অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারিতে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের চক্রান্ত উদঘাটন করা হয়েছে।
২০২০ সালে আগস্টে আকাশপথে সাইবেরিয়া হয়ে যাওয়ার সময় লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে জরুরি অবতরণ করে ওমস্কের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এ যাত্রায় তিনি বেঁচে যান। রুশ কর্মকর্তারা অবশেষে তাকে চিকিৎসার জন্য বার্লিনে যাওয়ার অনুমতি দেন।
জার্মান সরকার বলেছিল, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত পরীক্ষা থেকে নাভালনির দেহে ‘নোভিচক গ্রুপের রাসায়নিক নার্ভ ওয়ারফেয়ার এজেন্টের প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে ক্রেমলিন।
‘নাভালনি’ ডকুমেন্টারি মুক্তি পায় ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল। পরের বছরের মার্চে অস্কারের ৯৫তম আসরে ‘বেস্ট ডকুমেন্টারি ফিচার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় চলচ্চিত্রটি। আর এক বছর পর গত শুক্রবার রাশিয়ার এক কারাগারে পুতিনবিরোধী এই নেতার মৃত্যুর খবর দেয় দেশটির সরকার।
৪৭ বছর বয়সী নাভালনিকে রাখা হয়েছিল মস্কো থেকে ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে খার্প এর পেনাল কলোনির কারাগারে। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার সুমেরু বৃত্তের ‘আইকে-৩’ নামের সেই কুখ্যাত কারাগার সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন। ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক বিরোধী ও বন্দীদের সেখানে রাখা হত।