আংকারায় তুরস্ক ও ইরানের প্রেসিডেন্ট গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে পদক্ষেপের ডাক দিলেন। এদিকে ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসন তুরস্ককে যুদ্ধবিমান সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছে।
ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে পারে তুরস্ক। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতেও পিছপা হয় না দেশটি। অনেক টালবাহানার পর অবশেষে ন্যাটোয় সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে আংকারা।
বুধবার আবার প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্কের এমন অভিনব প্রভাব প্রতিপত্তির পরিচয় পাওয়া গেল। এদিন তিনি রাজধানী আংকারায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে স্বাগত জানান। একই দিনে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তুরস্ককে এফ-১৬ বিমান বিক্রির লক্ষ্যে কংগ্রেসের অনুমোদন চেয়ে চিঠি লিখেছেন।
এরদোয়ান ও রাইসি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তুরস্ক অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির দাবি জানিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের প্রতিও সে দেশের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
পশ্চিমা সহযোগী ও কয়েকটি আরব দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করলেও তুরস্ক সেই মূল্যায়ন মানে না। এ ক্ষেত্রে বরং ইরানের অবস্থানের সঙ্গে এরদোয়ানের নীতির বেশি মিল রয়েছে। ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসেবে তেহরান হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে আসছে।
বুধবারের আলোচনার পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান গাজার ওপর ইসরায়ের ‘অমানবিক’ হামলার কড়া সমালোচনা করেন। এমন এক সময়ে এরদোয়ান ও রাইসির বৈঠক হলো, যখন মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী ইয়েমেনে ইরানের মদতপুষ্ট হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। গোটা অঞ্চলে ইরান ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠার স্থাপনার ওপর ইসরায়েল হামলা চালিয়ে আসছে।
তবে কড়া সমালোচনা সত্ত্বেও তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। সেই সিদ্ধান্ত ও সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের মদদের কারণেও ইরান তুরস্কের সমালোচনা করে এসেছে।
এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার পরেও রাইসি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সব দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রয়োজন আছে। আর্মেনিয়া ও আজেরবাইজান সংকটের ক্ষেত্রেও দুই দেশের মতপার্থক্য রয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন প্রতিশ্রুতি মেনে তুরস্ককে অবিলম্বে লকহিড মার্টিন কোম্পানির এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রায় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বিমানগুলো তুরস্কের সামরিক ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে। তুরস্কের সংসদ ন্যাটোয় সুইডেনের যোগদান অনুমোদন করার পর এর্দোয়ান এখনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেই আইন স্বাক্ষর করেননি। এফ-১৬ সরবরাহের দিনক্ষণও এখনো স্থির হয়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বছরে বাইডেন প্রশাসন ও কংগ্রেসের মধ্যে জোরালো বিরোধের কারণে ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত সহায়তা আটকে রয়েছে। তুরস্কের প্রশ্নে কংগ্রেস কিছুটা নরম অবস্থান নেবে কিনা, তাও এখনো স্পষ্ট নয়। একাধিক প্রশ্নে এরদোয়ান মার্কিন নীতির বিরোধিতা করে আসায় কংগ্রেসে প্রতিরোধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।