জনপ্রশাসনে সচিব পদে শিগগির রদবদল আসছে। এই পদে পদোন্নতিও দেওয়া হবে বেশ কয়েকজনকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
চলতি মাসে অভিজ্ঞ ও নতুনদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সচিব পদে অভিজ্ঞ ও দক্ষতার পরিচয় দেওয়া কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ বেশ কয়েকজনের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিবর্তন হতে পারে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি স্তরে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এবার নিয়মিত বিসিএস ১৮ ও ৩০তম ব্যাচ থেকে এ দুই পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।
গত বছর এপ্রিলে অতিরিক্ত সচিব ও ১ নভেম্বর উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এবার ১৮তম ব্যাচের বড় একটি অংশসহ বাদ পড়া (লেফট আউট) সপ্তম ব্যাচ থেকে ১৭তম ব্যাচ, অন্য ক্যাডারসহ আগে পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার সব তথ্য যাচাই করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে পুলিশে বড় পদোন্নতি দেওয়া হয়। তখন অতিরিক্ত আইজি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত বছর তিন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে ১ হাজার ৬০৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, সাধারণত সরকার গঠনের এক ও দুই মাস পর সচিব পদে কিছু রদবদল হয়ে থাকে। এবার অনেক নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এসেছেন। তাদের রানিংমেট হিসেবে যোগ্য সচিব দরকার। তিনি বলেন, গত মেয়াদে সরকার অনেকটাই আমলানির্ভর ছিল। মন্ত্রীদের সামনে রেখে গুটিকয়েক আমলাই মন্ত্রণালয়ের কলকাঠি নেড়েছেন। কিছু মন্ত্রী আমলাদের পরামর্শই গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। আবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের চেয়ে সচিবদের ক্ষমতাই বেশি ছিল।
আসলে নীতিনির্ধারক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সচিবরাই। এবার যেন এমনটা না হয়, সেই চিন্তা সরকারের ভেতরে আছে। মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে আসা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবার সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বেশি মনোযোগী ও দৃঢ়।
এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান সমকালকে বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু রদবদল হতেই পারে। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, সচিব পদে কেউ পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হলে তাদের তা দিতে হবে। তারা দেশের জন্য কাজ করেন, সুতরাং তাদের সময়মতো পদোন্নতি প্রয়োজন।
অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর ১১ নভেম্বর প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের আরও ৬২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিন ধাপেই অনুমোদিত পদের চেয়ে বেশি পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনের আগে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে এসএসবির কয়েক দফা সভা করা হলেও পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। ওই সব বৈঠকে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির অভিযোগসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আরও সভা করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
সাড়ে তিন বছর ধরে যুগ্ম সচিব পদে চাকরি করার পর ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব করা হচ্ছে। এ ব্যাচে ১০০ কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে যোগদান করেন। এর মধ্যে কাজ করছেন ৯২ কর্মকর্তা। প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত ৪২০ জন, অর্থাৎ অনুমোদিত পদের তিন গুণের বেশি। এর সঙ্গে আরও ১০০ জন যুক্ত হলে প্রশাসনের মাথা ভারী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষার জন্যই বিভিন্ন স্তরে পদসংখ্যার বিন্যাস হয় পিরামিডের মতো। এ পিরামিডের আকৃতি নষ্ট হলে ভারসাম্যও নষ্ট হয়।
উপসচিব পদে পদোন্নতি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ২৪০ কর্মকর্তা। বিসিএস ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তারা উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এবার বিসিএস নিয়মিত ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রেষণ (এপিডি) উইং থেকে তথ্য চেয়ে সম্প্রতি জনপ্রশাসনের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কম্পিউটার সেন্টার (পিএসিসি) শাখাকে পত্র দেওয়া হয়েছে।