পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইসের চোরাবালিতে দীর্ঘ সময় আটকে থাকা বিনিয়োগকারীরা মুক্ত হতে যাচ্ছেন। টানা পতন ঠেকাতে আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস ফের উঠে গেছে। আগামী রবিবার থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে আবার গতি ফিরবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
৩৫টি কম্পানির শেয়ার ছাড়া সব কম্পানির ওপর থেকে বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারের দামে বড় কোনো উত্থান-পতন হচ্ছিল না। এতে ক্রেতাও মিলছিল না। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে বাজারে ব্যাপক পতন হবে—এমন আশঙ্কা পুঁজিবাজারকে জটিল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যায়। তবে পুঁজিবাজারে গতি আনতে দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনের পর থেকে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৫৪৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
আগের সপ্তাহে চার দিনে এক হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এই হিসাবে গত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৬০০ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৩৭.৬০ শতাংশ। আর চলতি সপ্তাহের দুই দিন যথাক্রমে ৭৬৫ কোটি ও ৬৭৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩০১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল।
গতকাল লেনদেন শেষে এটি ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, নির্বাচনের পরই ফ্লোর তুলে নেওয়া হবে। ইউরোপ-আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ সবাই এখন বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চায়। অর্থনীতির রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তার মানে আগামী দিনে অর্থনীতি আরো অগ্রসর হবে। তাই পুঁজিবাজারও সেই ধারায় নতুন মাত্রা পাবে বলে আশা করছি।
পুঁজিবাজারে লাগাতার পতন ঠেকাতে না পেরে গত চার বছরে কয়েক দফায় শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ মার্চে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের ১৭ জুলাইয়ে। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গত বছরের ১ মার্চ সব শেয়ারের দরে নিচের সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশ বেঁধে দেয় সংস্থাটি। এ ব্যবস্থা কাজ না করায় গত বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে সংস্থাটি। পরবর্তী সময়ে শেয়ার লেনদেন ব্যাপক কমে গেলে সমালোচনায় পড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে। আর ফ্লোর প্রাইসের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিশন আশা করছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাজারে গতি ফিরে আসবে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘বাজারে ভালো কম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারের উন্নতি সম্ভব নয়। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অ-তালিকাভুক্ত কম্পানির কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ, এটা খুবই কম। করহার বাড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সব সময় এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুতরাং ভালো কম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’