মুকিত হোসাইন, পরিচিত ‘বোমা মাওলানা’ নামে। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু’র কাছ থেকে ১০ কেজির মতো গান পাউডার নিয়ে কয়েক দফায় প্রায় ৪০০ হাত বোমা তৈরি করেন তিনি। পরে এসব বোমা সাপ্লাই করেন বিভিন্ন থানা যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের কাছে। তার সরবরাহ করা হাত বোমা ঢাকা মহানগর জজ কোট আদালতের প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
শুধু তাই নয়, তিনি পরিকল্পনা করছিলেন কোথা থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম সংগ্রহ করা যায় আর কাকে দিয়ে এসব বোমা বিস্ফোরিত করে কাকে কাকে পঙ্গু করা যায়। তিনি যুবদলের কর্মীদের শিখিয়েও দিতেন কীভাবে আগুন লাগাতে হবে। আগুন লাগানোর ছবি লন্ডনে পাঠানো হলে পুরস্কৃত করা হবে বলেও কর্মীদের বলতেন তিনি।
মুকিত হোসাইন ওরফে বোমা মাওলানাকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছে। ডিবির লালবাগ বিভাগ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। ডিবি বলছে, মুকিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে মুকিত হোসাইন ওরফে বোমা মাওলানাকে খুঁজছিলাম। তার আসল নাম মুকিত। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি বোমা মাওলানা নামে পরিচিত।
হারুন জানান, এক সময় মুকিত আলিয়া মাদ্রাসা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও পরবর্তীতে সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্রদল মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩-১৪ সালে বোমা বানাতে গিয়ে তার ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। এরপর থেকে তার নাম হয়ে যায় বোমা মাওলানা।
দলীয় আনুগত্য ও উগ্র কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাকে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
হারুন বলেন, মহানগর জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে যে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল সেটার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বোমা মাওলানা। ২৭ অক্টোবর রাতে মতিঝিল ব্যাংক কলোনিতে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু’র পাঠানো ১০ কেজি পরিমাণ গান পাউডার বোমা মাওলানা রিসিভ করেন ভাটারা থানার যুবদলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম নয়নের কাছ থেকে। এ এই গান পাউডার দিয়ে কয়েক দফায় প্রায় ৪০০ হাত বোমা তৈরি করেন। যুবদলের সদস্য সোহেল খান ও অভি আজাদ চৌধুরীর নির্দেশে তার সরবরাহ করা একটি হাত বোমা ঢাকা মহানগর জজ কোট আদালতের প্রাঙ্গণে বিস্ফোরিত হয়। ওয়ারীর আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী হাফসা আক্তার এই বিস্ফোরণ ঘটান।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, প্রতিটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য আগুনদাতাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়া বিস্ফোরণ ঘটানো ও মশাল মিছিলের জন্য ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় মহানগর যুবদলের পক্ষ থেকে।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রায় ৬-৭ হাজার লোকের মিছিল নেতৃত্ব দিয়েছেন বোমা মাওলানা।
হারুন আরও বলেন, নাশকতার জন্য যারা বোমা বানায় এবং বাস ও ট্রেনে যারা নাশকতা করে তাদের অনেকের নাম পেয়েছি। এই বোমা মাওলানা ২৭ অক্টোবর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর সেখানে বসে তিনি পরিকল্পনা করছিলেন কোথা থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম সংগ্রহ করা যায়, কাকে দিয়ে এসব বোমা বিস্ফোরিত করে কাকে কাকে পঙ্গু করা যায়।