বিশেষ প্রতিবেদক
আহমদ রফিক। ভাষা ভিত্তিক একটি উদার ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে। স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি মানবিক চেতনাবোধে ঋদ্ধ স্বদেশ নির্মাণের। অথচ আজ তিনি স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় কাতর।
দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সংস্কৃতির বাস্তবতা তাকে ব্যথিত করে। ভিশন নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আহমদ রফিক তাই অকপটে উচ্চারণ করেন – আমরা কি এই সমাজ চেয়েছিলাম?
আহমদ রফিকের কাছে প্রশ্ন ছিল যে চেতনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন আজকের বাংলাদেশ কি সেই চেতনায় পথ চলছে?
নিশ্চিত স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর এই ভাষাসংগ্রামী বলেন, এতদিনেও আমাদের সুস্থ জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেনি। যদি ঘটতো তাহলে প্রতিদিন শিশুধর্ষণ নারীধর্ষণ এর ঘটনা ঘটত না। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে বিদেশে পাচার হতো না। যে চেতনায় আমরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম আমাদের সমাজ জীবন ব্যক্তিজীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করছি না।
জানতে চেয়েছিলাম সংকট উত্তরণের উপায় কি?
এক কথায় আহমদ রফিকের উত্তর -দেশে সুশাসন, মানবিক মূল্যবোধ ও শতভাগ গণতান্ত্রিক চেতনা প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত এই সংকট থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারবে না।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতারআজন্ম লালিত স্বপ্নের পথ ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাঙালি জাতি পথ চলছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ এ ভাষাসংগ্রামী বলেন, একাত্তরে আমাদের মধ্যে সহমর্মিতা ছিল, আজ যা পুরোপুরি অনুপস্থিত। আজ এমন সভ্য সমাজে আমরা বাস করছি, যেখানে ধর্ষিতা একজন শিশু কিংবা নারীর পাশে আমরা দাঁড়াচ্ছি না। এটা কোন ভাবেই সভ্য সমাজ হতে পারে না।
জানতে চেয়েছিলাম দেশের বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা শতভাগ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আহমদ রফিক বলেন, যদি সম্ভব হতো তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা এমন হতো না। প্রতিদিন যখন দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম দেখি,প্রতিদিন যখন ধর্ষিতা নারীর সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে, তখন আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।নিজের কাছেই প্রশ্ন করি এ কোন সমাজ এজন্যই কি আমরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করেছিলাম , এজন্যই কি আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম?
তাহলে কি আমরা এই সংকটের ঘূর্ণায়মান বৃত্তেই পথ চলব এমন প্রশ্নে খানিকটা বিচলিত হয়ে আহমদ রফিক বলেন, সমাজটাকে বদলাতে হবে। সমাজ থেকে ভাঙচুর করতে হবে। ভাঙচুর করে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। সেজন্য হয়তো আরো ২০ বছর ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।