হঠাৎই জোরালো বিস্ফোরণ। তার পরই গুলির শব্দ। বুঝতে দেরি হয়নি বড়সড় কোনও বিপদ আসতে চলেছে। অনুমান তাঁর ঠিকই হয়েছিল। সেই বিস্ফোরণ শোনার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পিল পিল করে সশস্ত্র বাহিনী গাজ়া সীমান্ত টপকে ইজ়রায়েলে ঢুকতে শুরু করে। আর এক মুহূর্ত দেরি করেননি। সশস্ত্র বাহিনীকে আটকাতে নিজের দল নিয়ে পুরো শক্তি লাগিয়ে দেন। তিনি ইজ়রায়েলি তরুণী ইনবার লিবারম্যান।
গোটা ইজ়রায়েলের চোখে এই তরুণী লিবারম্যানই এখন ‘নায়ক’। তাঁকে সম্মানিত করার দাবিও উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কেন তাঁকে নিয়ে এত হইচই হচ্ছে?
গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের মাটিতে হামলা চালায় প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র বাহিনী হামাস। জল, স্থল এবং আকাশপথ— তিন দিক থেকে হামলা চালায় হামাস বাহিনী। গাজ়া ভূখণ্ড থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সীমান্তলাগোয়া ইজ়রায়েলের গ্রাম নির অম গ্রাম। এখানে কিবুজ সম্প্রদায়ের বাস। ইজ়রায়েলের সেরোট শহরের খুব কাছেই এই গ্রামটি।
গাজ়া সীমান্ত ঘেঁষা এই সেরোট শহরে বেশ কয়েক বার হামাসের হামলা হয়েছিল। তাই ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট জোরদার। সীমান্তলাগোয়া গ্রাম এবং শহরগুলিতে যাতে হামাস বাহিনী কোনও আঁচড় না কাটতে পারে, তাই ছোট ছোট দলে ভাগ করে শহর এবং গ্রামগুলির নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয়দের নিয়ে গড়ে তোলা বাহিনীকে। সে রকমই একটি বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন লিবারম্যান।
২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নির অম গ্রাম এবং কিবুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন লিবারম্যান। ৭ অক্টোবর স্থানীয় সময় তখন সকাল সাড়ে ৬টা। গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সেরোট পর পর বিস্ফোরণের আওয়াজ পেয়েছিলেন। হামলা হয়েছে বুঝতে পেরে তিনি দলবল নিয়ে নির অম গ্রামকে পুরো ঘিরে ফেলেছিলেন।
হামাস বাহিনী তত ক্ষণে সেরোটে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছিল। ঘর থেকে টেনে বার করে খুন করা, অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল বাসিন্দাদের। লিবারম্যান খবর পেয়েছিলেন হামাস হামলা চালিয়েছে। সেরোট লন্ডভন্ড করে নির অমের দিকে এগোচ্ছে তারা।
লিবারম্যান দ্রুত তাঁর দলকে পজ়িশন নেওয়ার নির্দেশ দেন। তত ক্ষণে নির অমের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছিল হামাসের একটি দল। গ্রামের ভিতরে ঢুকতে যেতেই লিবারম্যানের দলের বাধার মুখে পড়ে হামাস। হামাস সদস্যদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালাতে শুরু করে লিবারম্যান ও তাঁর বাহিনী। আচমকা হামলার মুখে পড়ে প্রথমে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল হামাসের দলটি। কিন্তু তারাও দ্রুত পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে।
দু’পক্ষের মধ্যে ৪ ঘণ্টা ধরে গুলির লড়াই চলে। লিবারম্যান নিজে গুলি করে হামাসের পাঁচ সদস্যকে খতম করেন। তাঁর দল হামাসের আরও ২০ জনকে গুলি করে মারে। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে শেষেমেশ পিছু হটে হামলাকারীরা। লিবারম্যান এবং তাঁর বাহিনী নির অমকে দুর্ভেদ্য করে তুলেছিল। ফলে হামাসের হামলার আঁচ এই গ্রামে পড়তে দেননি লিবারম্যান।
হামাসের হামলা থেকে নির অম বাঁচলেও পাশেরই কিবুৎজ়িম গ্রাম হামাসের হামলায় একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের খুন করা হয়েছে। অনেককে তুলে নিয়ে গিয়েছে হামাস বাহিনী। লিবারম্যানের দলেরই এক সদস্যের স্ত্রী ইলিত পাজ় ইজ়রায়েল হেয়মকে বলেছেন, “যে ভাবে লিবারম্যান এবং তাঁর বাহিনী আমাদের গ্রামকে রক্ষা করেছে, তা অভূতপূর্ব। গুলি এবং বিস্ফোরণের আওয়াজ পেতেই তৎপরতার সঙ্গে পুরো বিষয় সামলান লিবারম্যান।”
নির অম গ্রামে হামাস আঁচড় কাটতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু তার আশপাশের এলাকা ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। আকাশে, বাতাসে বারুদের গন্ধ। মাঝেমধ্যেই গুলি আর বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে আসছে বলে জানিয়েছেন নির অমের বাসিন্দারা।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে ইজ়রায়েল-হামাসের লড়াই। দু’পক্ষের এই লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় তিন হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত কয়েক হাজার। গাজ়াকে অবরুদ্ধ করে একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েল। হামাসের গোপন ডেরাগুলি খুঁজে সেগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা