প্রধান প্রজনন মৌসুমে নিরাপদ প্রজননের জন্য ১২ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বন্ধ হচ্ছে ইলিশ ধরা। আগামী ২২ দিন অর্থাৎ ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত দেশের কোনও নদনদীতে ইলিশ ধরা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা না মানলে আইনে এক থেকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে উপকূলীয় ইলিশ প্রজননক্ষেত্রের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায়। মা ইলিশ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানিয়েছে, মা ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই এই সময়ে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’ এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। ইলিশ আহরণে বিরত থাকা সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলেদের সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় চাল দেবে। ইলিশ ধরা বন্ধের এই কয়েক দিনে জেলেদের জন্য ভিজিএফের পরিমাণ ২০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ২৫ কেজি করা হয়েছে। এর আওতায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার জেলে পরিবারকে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিপণন নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা না মানলে আইনে কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। নিয়মিত চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা।
উল্লেখ্য, দেশের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকা এবং নদনদীতে মা-ইলিশ রক্ষায় সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করবে নৌবাহিনীর জাহাজ। গত দুই বছরের মতো এবছরও এসব জাহাজ অভিযানের অংশ হিসেবে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে বিশেষ টহল দেবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রধান মৌসুম মনে করা হলেও এখন সময় আরও বাড়িয়েছে সরকার। গবেষকদের মতে, ইলিশ শুধু আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় নয়, অমাবস্যায়ও ডিম ছাড়ে। তাইতো সময় বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ছুটে আসে নদীতে। ফলে মা-ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিবছর তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। সেই কারণেই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০০৮-০৯ সালে ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। এ বছর এর পরিমাণ ৬ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু সরকারের এতসব উদ্যোগের পরেও কিছু সংখ্যক দুর্বৃত্ত রাতের অন্ধকারে দেশের মেঘনাসহ বিভিন্ন এলাকার নদীতে ইলিশ শিকার করে। দিনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা গেলেও রাতে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নদীতে যান না। এই সুযোগেই শত শত জেলে রাতের অন্ধকারে ইলিশ শিকারে নদীতে নামছে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে। অবাধে ধরছে মা ইলিশ। ঢাকা থেকে নৌপথে বরিশাল ও ভোলা আসা যাওয়ার পথে এ দৃশ্য দেখা যায় সচরাচর।