অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৮ সেপ্টেম্বর সারাদেশে অভিযান শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক সপ্তাহে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৬৪টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান। অথচ গত বছর অভিযানের প্রথম দিনেই ৫২৯টি অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে এ বছর জোরালোভাবে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
সরকারি হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ১৪ হাজার ৭৪০টি। আর নিবন্ধনের জন্য অধিদপ্তরে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৩ হাজার। অভিযোগ রয়েছে, আরও ৪ থেকে ৫ হাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে চালু রয়েছে।
গত এক সপ্তাহে ২ হাজার ৮৩টি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার কর্মকর্তারা। লাইসেন্স না থাকা ও অতিরিক্ত ফি গ্রহণসহ নানা অনিয়মের কারণে তারা ১৬৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এসব প্রতিষ্ঠানকে ৪৯ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ছয়জনকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৬টি ঢাকা বিভাগে, ৩৩টি চট্টগ্রামে, ২০টি ময়মনসিংহে, ১৮টি রাজশাহীতে, ৮টি খুলনায়, ১৪টি রংপুরে, ২৫টি বরিশালে এবং ১০টি সিলেটের। আর গত বছরের অভিযানে আড়াই হাজারের বেশি অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান অভিযানের গতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। তা ছাড়া অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান বন্ধ হলে আবার খুলে যায়। এ জন্য সারাবছরই এ ধরনের অভিযান প্রয়োজন।
এবারের অভিযানে ধীরগতির কথা স্বীকার করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার কর্মকর্তা ডা. সালেহিন। তিনি বলেন, ‘এবার ঢাকায় অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছি। এটি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তবে লোকবল সংকটসহ নানা কারণে ঢাকার বাইরে গতবারের মতো একযোগে অভিযান চালানো যাচ্ছে না।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অভিযান শুরুর এক দিনের মাথায় নতুন লাইসেন্স ও নবায়নের জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। এতে প্রমাণ হয়, স্বাস্থ্যসেবা খাতে যথাযথ তদারকির অভাব ছিল। এমন অবস্থায় ধীরগতির অভিযান বেহাল স্বাস্থ্যসেবা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কতটা কার্যকর হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মিত এ ধরনের অভিযানের পাশাপাশি আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, ভয়ভীতি ও করুণার ঊর্ধ্বে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
অবৈধ হাসপাতালের মালিকানা কিংবা সেখানে কর্মরত থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এসব অবৈধ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট চেম্বার করে রোগী দেখলেও একই শাস্তির খড়গ নেমে আসবে। অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে টানা প্রায় তিন সপ্তাহ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েও আশানুরূপ সফলতা না আসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।