The news is by your side.

দেশে কোটি টাকার সম্পদ লিবিয়াপ্রবাসী মাফিয়া শরীফের

0 139

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা আবুল কাশেম। লিবিয়াপ্রবাসী শাহরুল ইসলাম তার একই গ্রামের বাসিন্দা ও পূর্বপরিচিত। শাহরুল তার ছেলে লাজু মিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি রাজি হন। সব প্রক্রিয়া শেষে মাস চারেক আগে লাজুকে শাহরুল লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর ‘গেমঘর’ নামে এক জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে শরীফ হোসেন নামে একজন।

নিরুপায় হয়ে আবুল কাশেম বিষয়টি র‌্যাব-১১-এর কুমিল্লা ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের জানান। টাকা পরিশোধের কথা বলে র‌্যাব সদস্যরা ছদ্মবেশে শরীফের বাবা আনোয়ার হোসেন, তার ছেলে শিহাব হোসেন ও সুমন মিয়াসহ তিন জনকে আটক করেন। এ ঘটনায় আবুল কাশেম বাদী হয়ে কুমিল্লার চান্দিনা থানায় মানবপাচার আইনে আটক হওয়া তিনজনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

শরীফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় থাকে। তার বাড়ি কুমিল্লায়। ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দেশের শত শত যুবককে নানাভাবে প্রথমে নিয়ে যায় লিবিয়ায়। সেখানে যাওয়ার পর তাদের আটকে রাখে ওই ‘গেমঘরে’। এরপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের ছবি-ভিডিও দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়। তারপর দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। আর সেই অর্থ সংগ্রহ করে দেশে থাকা শরীফের পরিবার ও স্বজনরা। সেই টাকায় দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে শরীফ। যাকে এখন বাংলাদেশ ও লিবিয়ায় মাফিয়া শরীফ হিসেবেই সবাই চেনে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, শরীফ হলো লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপে মানবপাচারের বড় সিন্ডিকেটের মূল হোতা। দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার তরুণ যুবকদের ইউরোপে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে গেমঘরে আটকে রাখে। এরপর নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।

তারা  জানান, এর আগে একাধিক ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু লিবিয়ায় অবস্থান করে একই কাজ করে যাচ্ছে শরীফ। দেশে বসে তার বাবা-ভাই ও স্ত্রীসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন মুক্তিপণের অর্থ গ্রহণ করে। মুক্তিপণের মাধ্যমে আদায় করা কিছু অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে লিবিয়া নিয়ে যায় শরীফ, বাকি অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শরীফ তার বাবা, ভাইবোন, মা ও স্ত্রীর নামে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলে।

র‌্যাব-১১-এর কমান্ডিং অফিসার তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, শরীফ লিবিয়ায় বসে মানবপাচারের একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক তরুণ-যুবকদের লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে। দেশে বসে তার বাবা-ভাই সেসব অর্থ গ্রহণ করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, মানবপাচারের ঘটনায় গেম হলো সমুদ্রপথে পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। আর ‘গেমঘর’ হলো একটি কক্ষ, যেখানে সমুদ্রপথে রওনা দেওয়ার আগে গাদগাদি করে অনেকজনকে রাখাকে বলে। লিবিয়ার বেনগাজি ও উপকূলীয় শহর জুয়ারায় মাফিয়া শরীফের একাধিক গেমঘর রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি ও লিবিয়ার স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে শরীফ শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে শরীফের নিয়োগ করা অসংখ্য দালাল রয়েছে। তারা ইতালি, গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ভারত, নেপাল, দুবাই, ওমান হয়ে লিবিয়া নিয়ে যায়। এ জন্য প্রথমে বিদেশগামীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টাকা। বাকি টাকা ইউরোপে গিয়ে পরিশোধের কথা বলায় বিদেশগামীদের অভিভাবকরাও সহজেই রাজি হয়ে যান। লিবিয়ায় নেওয়ার পরই শরীফের আসল চেহারা দেখতে পারেন তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, শরীফের সিন্ডিকেটের সদস্যরা অন্যান্যভাবে যারা লিবিয়ায় যায়, তাদেরও দুই-তিন লাখ টাকায় কিনে নিয়ে নিজেদের গেমঘরে আটকে রাখে। পরে নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দিগুণ বা তিন গুণ অর্থ আদায় শুরু করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.