The news is by your side.

ভোলা-১: দলীয় মনোনয় পেতে নেতাদের দৌড়ঝাপ

0 289

 

মোঃ মহিউদ্দিন,ভোলা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে দলীয় মনোনয় পেতে দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। দলের প্রতি নিজের ত্যাগ, শ্রম, জেল জুলুমসহ দলীয় কর্মকান্ডে নিজের ভূমিকা নিয়ে উপর মহলে তুলে ধরছে  মনোনয়ন প্রত্যাশিরা।

ভোলা-১ আসনে আওয়ালীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছে তোফায়েল আহমেদ, মাহবুবুর রহমান হিরণ, ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা , হেমায়েত উদ্দিন ।

বিএনপি থেকে মনোনয় প্রত্যাশা করছে , গোলাম নবী আলমগীর, আসিফ আলতাফ । এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পাটির একক প্রার্থী রয়েছে ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ।

স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ দলকে সুসংগঠিত করে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করেছেন। তিনি ভোলা সদর আসন থেকে পাঁচবার এবং ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে দুইবারসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আগামী নির্বাচনেও তিনি ভোলা সদর আসনে একক প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়নের তালিকায় রয়েছে  বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ভোলার ঐতিহ্যবাহী মিয়া পরিবারের কৃতিসন্তান আলহাজ মাহবুবুর রহমান হিরন।

মাহবুবুর রহমান হিরন ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন রাজশাহী বিবিদ্যালয় ছাত্রলীগ দিয়ে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী ( জালাল-জাহাঙ্গীর) পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। সে ভোলা জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব  সুনামের সহিত পালন করেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী ( শেখ সেলিম -ইকবাল) পরিষদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী  (নানক -আজম)পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে  দায়িত্ব  পালন করেন। তিনি আওয়ামী যুবলীগের ( ওমর ফারুক- হারুন) পরিষদের  প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে যুব সমাজের মধ্যমনিতে পরিনত হন। ভোলাবাসীর বিশ্বাস আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে এই নেতার হাতে দ্বীপ জেলা ভোলার ১৮ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোলা -১ আসনের দলীয় মনোনয়ন তুলে দিবেন ।

অন্যদিকে, বিগত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছে কেন্দ্রের দিকে। তারা বলছে, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দলের মনোনীত প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম নবী আলমগীর, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসূল আলম ও থানা বিএনপির আহবায়ক আসিফ আলতাফ ।

এ ছাড়া রাজনৈতীক ব্যাক্তিত্ব ভোলার উন্নয়নের অন্যতম রুপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর বড় ছেলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ভোলা -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ তার দল থেকে সদর আসনে নির্বাচন করবেন বলে দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

রাক্ষসী মেঘনা আর প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভোলা-১ (সদর) আসন। জাতীয় সংসদের ১১৫ নম্বর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার ৮১১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৮২, নারী ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজার ৭২৮ এবং হিজড়া এক জন।

বিগত নির্বাচন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, এ আসনটি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ১৯৭০ সালে প্রথম এম এল এ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। এরপর ১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে আসনটি চলে যায় বিএনপির দখলে। তখন পারিবারিক প্রভাবের কারণে সংসদ সদস্য হন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহান। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। তখন সংসদ সদস্য হন দলের প্রভাবশালী নেতা ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু। ১৯৯১ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। তখন সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা তোফায়েল আহমেদ। ২০০১ সালে এ আসনে চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি বিজেপি চেয়ারম্যান পার্থর কাছে হেরে যান। এরপর থেকে ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন ভোলায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই নির্বাচনে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন তোফায়েল আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে আবার সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোলা-১ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অংশ নিবেন বলে জানায় দলের নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলের জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন মাহাবুবুর রহমান হিরণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক নেতা হেমায়েত উদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা বলছেন, তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার পর এলাকায় উন্নয়ন কাজ করেছেন। তোফায়েল আহমেদ নদীভাঙনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষায় কাজ করেছেন। পৌর এলাকায় আংশিক বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণে কাজ করেছেন। ভোলার উন্নয়নে তার অবদান অপরিসীম।

অপরদিকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান হিরণ রুপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক থাকালীন ভোলায় দলীয় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের চাকরীর ব্যাবস্থা করেছিলো।এছাড়া ব্যাংকের কল্যাণ তহবলি থেকে ভোলা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি স্কুলের উন্নয়নের জন্য সর্বউচ্চ টাকা অনুদান  প্রদান করাসহ ভোলা প্রেসক্লাব, ফজিলতুন নেসা মহিলা কলেজ ও আব্দুর রব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব করে দেন। এছাড়া তার নিজার অর্থায়নে ভোলায় প্রথম লাশবাহী একটি গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিয়ে ভোলার মানুষের ব্যাপক সাধুবাদ পান তিনি।   সে কারণে দলের আগামী নির্বাচনেও ভোলা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা তিনি।

ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য সব শাখার কমিটিও গঠন-পুনর্গঠন করে দলকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে।

ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোলা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহাবুবুর রহমান হিরণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক নেতা হেমায়েত উদ্দিনও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

ভোলা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব রাইসুল আলম  জানান, আপাততঃ তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলের। আর যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয় তাহলে দলের মনোনীত প্রার্থী যাকে দেয়া হয় তার সাথেই কাজ করবেন তিনি । আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শফিউর রহমান কিরন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আগের নির্বাচনগুলো একরকম হয়েছে। জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে একক নির্বাচন হবে, নাকি জোটভুক্ত নির্বাচন হবে। জোটভুক্ত হলে কতজোট হবে তা এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোন সূযোগ নেই। দলের মনোনয়নের বিষয়েও চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার পক্ষেই নির্বাচন করবো।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.