দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে চলতি আমদানি ব্যয় ও আগে স্থগিত করা বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়ায় রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।
এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অপরদিকে রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও অনুদান কমে যাওয়ায় রিজার্ভে ডলার যোগ হচ্ছে কম। ফলে রিজার্ভ বাড়ছে না।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৩৮ কোটি ডলার। ১০ আগস্ট ছিল ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ডলার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ১৬ কোটি ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টের আকুর দেনা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৩১৪ কোটি ডলার। ১০ আগস্ট ছিল ২ হাজার ৩২৬ কোটি ডলার। ওই সময়ে নিট রিজার্ভ কমেছে ১২ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভের চেয়ে গ্রস রিজার্ভ ২ কোটি ডলার বেশি কমেছে। কারণ রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে নেওয়া অর্থ কমিয়ে ফেলায় গ্রস রিজার্ভ বেশি কমেছে।
ডলার নিয়ে বিদ্যমান বাস্তবতায় পণ্যমূল্য যেমন বাড়ছে, তেমনি এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাপনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এতে পণ্যমূল্য যেমন বাড়ছে, তেমনি এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাপনে নাভিশ্বাস ওঠেছে।
এর আগে ৩ আগস্টের তুলনায় ১০ আগস্টে নিট রিজার্ভ কমেছিল ৪ কোটি ডলার এবং গ্রস রিজার্ভ কমেছিল ১০ কোটি ডলার। ৩১ জুলাই গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৭২ কোটি ডলার ও নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ডলার। গত দুই সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ২৬ কোটি ডলার ও নিট রিজার্ভ কমেছে ১৪ কোটি ডলার।
বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত আমদানির সাড়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের আমদানির তিন মাসেরও কম ব্যয় মেটানো যাবে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৭০০ কোটি ডলারের বেশি আমদানি ব্যয় হয়। বর্তমানে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় তা ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
গত বছরের ১৭ আগস্ট দিনের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৯৫৫ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ১৭ কোটি ডলার।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে তা কমতে থাকে। মে মাসে রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৯৮৭ কোটি ডলারে নামে। জুনে সামান্য বেড়ে ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলারে ওঠেছিল।
জুলাইয়ে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১০৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা আবার কমে ২ হাজার ৯৭২ কোটি ডলারে নেমে যায়। এখন পর্যন্ত আর ৩ হাজার কোটি ডলার স্পর্শ করতে পারেনি।
এদিকে সরকার রিজার্ভ বাড়াতে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব ঋণ রিজার্ভে যোগ হলে এর ওপর চাপ কিছুটা কমতে পারে।