জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগস্টজুড়ে শোকের মাসের কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনমুখী তৎপরতার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরে সমন্বিত গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু হবে। সারাদেশে বিভাগ, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বড় সমাবেশ আয়োজন করা হবে।
এসব সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীকে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকেও আলাদা কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে মানুষের সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টাও চলবে।
রাজনীতির মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘিরে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস-সহিংসতা মোকাবিলায় চলমান শান্তি সমাবেশ ও রাজপথে সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন এগিয়ে আসার প্রেক্ষাপট এবং বিএনপির সরকার পতন আন্দোলন শুরুর ঘোষণায় শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত করে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায়ও নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের নেতাদের জানান, চলতি মাসে দলের রুটিন কর্মসূচিগুলো চলবে। আগস্টে বরাবরের মতো থাকছে দল ও সহযোগী সংগঠনের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি। শোকের মাসের কর্মসূচি পালনের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনমুখী কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। সেপ্টেম্বর থেকে দলীয়ভাবে নির্বাচনের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া হবে। নেতাদের সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাও দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী ও নির্বাচনমুখী করার তৎপরতা চলবে। এ লক্ষ্যে চলতি মাসে তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে মতবিনিময় করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গত মাসেও বেশ কিছু মহানগর ও জেলার নেতাদের গণভবনে ডেকে কয়েক দফা মতবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি মাসে বিশেষ করে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জড়িত এবং সম্মেলনের দীর্ঘদিন পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এমন মহানগর ও জেলা শাখার নেতাদের ঢাকায় ডাকা হতে পারে।
এখন পর্যন্ত দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৬-২৭টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এ ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্মেলনও বাকি রয়েছে। নির্বাচনের আগে নতুন কোনো সম্মেলন না করা হলেও এসব জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান জোরদার করাসহ অন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণের কোনো থানা ও ওয়ার্ড কমিটি আট মাসেও গঠন না হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। নির্বাচনের আগে এসব কমিটি গঠন ও নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে না পারলে নির্বাচনের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৫০টি থানা ও ১৩৯টি ওয়ার্ড এবং ১ হাজার ৪৮৫টি ইউনিটের সম্মেলন কার্যক্রম শেষ হয়েছে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে। সম্মেলনস্থলেই সব ইউনিট কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি সিংহভাগ ইউনিট কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রের বারবার তাগিদ, নির্দেশ ও হুঁশিয়ারির পরও এখন পর্যন্ত কোনো থানা-ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হয়নি।
এ ছাড়া সংগঠন গুছিয়ে নেওয়াসহ যেসব সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, সেগুলোতে কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যৌথসভায় সাত মাস আগে সম্মেলন হলেও যুব মহিলা লীগ এবং ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের। দ্রুত এ দুই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।