১৮৭৭ সালে যে প্রতিযোগিতার জন্ম, তারা ২০২৩ সালে এসে জানাল, এ বার থেকে মহিলা প্রতিযোগীরা সাদা ছেড়ে রঙীন অন্তর্বাস পরে খেলতে পারবেন। ঋতুস্রাবের সময় মহিলারা যাতে নিশ্চিন্ত হয়ে খেলতে পারেন, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
দীর্ঘ দিন ধরেই এই দাবিতে কার্যত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন জুডি মারে (ব্রিটেনের মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং অ্যান্ডি মারের মা) ও আমেরিকার প্রাক্তন মহিলা খেলোয়াড় বিলি জিন কিং। তাঁদের দাবিকে অবশেষে মান্যতা দিল উইম্বলডন। নাক উঁচু সাহেবরা এত দিন ধরে আঁকড়ে ধরে থাকা গোঁড়ামির বর্ম খুলে একটু আধুনিক হল। কিং গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের সময়ে শুধু সাদা পরে খেলার অনুমতি ছিল। সব কিছু সাদা পরে খেলতে হত। ঋতুস্রাবের সময় অন্তর্বাস নিয়ে মাথা ঘামাতে হত। সব সময় খেয়াল রাখতে হত, কিছু বোঝা যাচ্ছে না তো, দাগ লাগছে না তো। ওই দিনগুলোতে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা থাকত। আসলে আমরা তো মানুষকে বিনোদন দিই। তাই পোশাক নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হত। সব কিছু নিখুঁত আছে কিনা, বার বার দেখে নিতে হত।’’
হয়তো এ বার নিখুঁত হল উইম্বলডন। অল ইংল্যান্ড ক্লাব জানিয়েছে, আর কোনও ছুৎমার্গ রাখবে না তারা। উইম্বলডনের সিইও স্যালি বোল্টন খানিকটা প্রায়শ্চিত্ত করার ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘‘আমাদের নীতিই হল, প্লেয়ারদের পাশে থাকা, তাদের সুযোগ-সুবিধা দেখা। যাতে সবাই নিজের সেরাটা দিতে পারে। বরাবর আমরা এই মানসিকতা নিয়েই চলেছি।’’ জুডি, কিং ছাড়াও স্বাভাবিক ভাবেই এখনকার খেলোয়াড়দের চাপ বেশি ছিল। বোল্টনের কথাতেই সেটা পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, ‘‘প্লেয়ারদের সঙ্গে আমরা অনেক বার কথা বলেছি। তাদের মতামত নেওয়ার পরে আমরা বিষয়টা নিয়ে অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত আমাদের ক্লাব কমিটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সত্যি বলতে কী, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা কঠিন ছিল না।’’ যদি কঠিন না হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত নিতে ১৪৬ বছর লেগে গেল কেন, তা নিয়ে অল ইংল্যান্ড ক্লাব কর্তৃপক্ষ চুপ।
এখনকার খেলোয়াড়েরা যে নিয়ম তুলে দেওয়ার পক্ষে, তা অনেক আগেই বোঝা গিয়েছিল। ব্রিটিশ খেলোয়াড় হেথার ওয়াটসন বলেছেন, ‘‘গত বছর আমাকে ওষুধ খেয়ে নামতে হয়েছিল। কারণ সাদা ছাড়া অন্য কোনও রঙের অন্তর্বাস পরার অনুমতি ছিল না। চাইনি, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি হোক।’’ অস্ট্রেলিয়ার দারিয়া সাভিলে বলেছেন, ‘‘প্রথম প্রথম সব কিছু সাদা পরে খেলতে ভালই লাগত। একটা অন্যরকম ব্যাপার। বন্ধুদেরও সেটা বলছিলাম। কিন্তু কয়েক জন বলল উইম্বলডন এলে ঋতুস্রাবের কথা ভেবে তারা আতঙ্কে থাকে। আমারও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাকে ঋতুস্রাব পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। এমনিতেই অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। তাই ঋতুস্রাবের দাগ নিয়ে আর ভাবতে চাইনি।’’
এখন ওয়াটসনেরা খুশি। নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা মেয়েদের পারফরম্যান্সে বিরাট তফাৎ গড়ে দেবে। যত দূর মনে হয়, এ বারও উইম্বলডনের সময়ই আমার পিরিয়ড হবে। কিন্তু গত বারের মতো এ বার আর আমাকে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড পিছিয়ে দিতে হবে না। সত্যিই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত উইম্বলডনকে অনেকটা এগিয়ে দেবে।’’
উইম্বলডন অনেকটা এগিয়ে গেল নিঃসন্দেহে। কিন্তু এগোতে লাগল ১৪৬ বছর। এর মধ্যে হয়ত অসংখ্য সাভিলে, ওয়াটসনরা খেলে গিয়েছেন, যাঁদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই অযাচিত মানসিক যন্ত্রণা। এ বার সেন্টার কোর্টে মহিলা খেলোয়াড়দের কালো অন্তর্বাস পরে খেলতে দেখা যাচ্ছে। ওই কালো রঙেই রয়েছে তাঁদের ‘মুক্তির’ আনন্দ।