মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, যিনি এসপি মাহবুব নামে পরিচিত। হঠাৎই সক্রিয় বরিশালের রাজনীতিতে।
বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার রাতে হঠাৎ করেই তিনি নিজের বাড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করেন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহসহ নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা–কর্মীরা যোগ দেন। নিমন্ত্রণ পাননি বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।
দীর্ঘদিন পর মাহবুব উদ্দিন আহমেদের এমন তৎপরতাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বরিশালের রাজনীতি পর্যবেক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, সিটি নির্বাচন ঘিরে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে যে বিভেদের সূচনা হয়েছিল, তারই প্রতিফলন মাহবুব উদ্দিনের এই তৎপরতা।
আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মনোনয়ন পাওয়া এবং তাঁকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। খায়ের আবদুল্লাহ মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সাদিক আবদুল্লাহর রাজনীতি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজনীতির মাঠে অবস্থান ধরে রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহিদ ফারুকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাহবুব উদ্দিনকে দাঁড় করানোর তৎপরতা হতে পারে এই ভূরিভোজ।
মাহবুব উদ্দিন রোববার বলেন, ‘আয়োজনটা আকস্মিকভাবে করা হয়েছে, এটা ঠিক। তবে আমি তো মাঠে ছিলামই। যেহেতু আগামী নির্বাচন সামনে, তাই দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যই ঈদের দিন রাতে এমন আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে নগর ও জেলার শীর্ষ নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।’
মাহবুব উদ্দিন স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া দলনেতা। তিনি ১৯৯৬ সালে বরিশাল সদর আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া একবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হতে পারেননি।
ঈদের দিন দুপুরে খায়ের আবদুল্লাহ বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে আপ্যায়ন করান। এতে যোগ দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ। ওই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা।
ঈদের দিন দুপুরের ওই অনুষ্ঠানের পরপরই রাতে হঠাৎ করে নগরের আমানগঞ্জ এলাকায় মাহবুব উদ্দিনের বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে। সেখানে সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরসহ অন্য নেতারা যোগ দেন।
এ কে এম জাহাঙ্গীর রোববার দুপুরে বলেন, ‘নবনির্বাচিত মেয়রের আয়োজনে আমরা নিমন্ত্রণ পাইনি। কেন পাইনি, সেটা জানি না। তবে এটা আশা করিনি। আমরাও তো নির্বাচনে অনেক পরিশ্রম করেছি।’ মাহবুব উদ্দিনের আয়োজন পাল্টা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘পাল্টা নয়, মাহবুব ভাই আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন, আমরা গিয়েছি। এর সঙ্গে কোনো রাজনীতি নেই।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, সিটি নির্বাচন ঘিরে বরিশাল আওয়ামী লীগে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছিল, নির্বাচনের পর তা নিরসন হবে বলে আশা করা হয়েছিল। তবে তা হয়নি। বরং তা আরও জমাট বেঁধেছে বলেই মনে হচ্ছে।