The news is by your side.

বিশ্বকাপে ইডেনের প্রাপ্তির পিছনে কি সৌরভ-বিজেপি ‘ইতিবাচক’ সমীকরণ!

0 159

 

আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পাঁচ-পাঁচটি ম্যাচ ইডেনে হওয়া নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রকাশ্যেই আলোচনা এবং প্রশংসা চলছে। সৌরভ রয়েছেন লন্ডনে। ক্রিকেট সংক্রান্ত কাজেই। সেই কারণেই মঙ্গলবার ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ক্রিকেট বিশ্বকাপের সূচিতে ইডেনের লাভের পিছনে তাঁর ‘হাতযশ’ রয়েছে বলে জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল।

লন্ডন থেকেই তিনি দেশের ‘প্রভাবশালী’ মহল’-এর সঙ্গে কথাবার্তা জারি রেখেছিলেন এই মর্মে, যাতে ইডেন ‘লাভবান’ হয়।

এই ‘প্রভাবশালী’ মহল নয়াদিল্লির নর্থ ব্লকের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক হওয়াই স্বাভাবিক বলে জানাচ্ছে ক্রীড়া রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক সূত্র। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, সৌরভকে আরও একটি ‘বার্তা’ দেওয়া হল। যে বার্তা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার পর্যটনের ‘ব্র্যান্ডদূত’ করে। যে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া ত্রিপুরার সরকার নিতে পারত না। বিজেপির মতো একটি দলে তা সম্ভবও নয়।

সবমিলিয়ে ইডেনের প্রাপ্তির পরে ক্রিকেট রাজনীতিতে আবার নতুন করে আলোড়ন উঠেছে। এর থেকে কেউই কোনও উপসংহারে পৌঁছচ্ছেন না। কিন্তু মনে করছেন, চোখকান খোলা রাখা ভাল। এই ঘটনা সেই সঙ্কেতই দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, যে সূচিতে ইডেন বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ রেয়েছে, সেই সূচিতেই বাদ পড়েছে দেশের একাধিক অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য। বামশাসিত কেরল বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ পায়নি। বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ পায়নি পঞ্জাবও। যেখানে কিছুদিন আগে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি। প্রসঙ্গত, পঞ্জাবের মোহালি এর আগে বিশ্বকাপের ভারত-পাক ম্যাচের সফল আয়োজন করেছে। বোর্ড সভাপতি রজার বিন্নী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও কর্ণাটকের রাজধানী এই শহর ভারতের যে ম্যাচটি পেয়েছে, সেটি ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’।

যে রাজ্যে সদ্য ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। তেলঙ্গানার হায়দরাবাদকে তিনটি ম্যাচ দেওয়া হয়েছে। সেই ম্যাচগুলিও গুরুত্বের বিচারে ‘ব্লকবাস্টার’ নয়।

কিন্তু সেখানে বিজেপির ঘোর বিরোধী তৃণমূলের শাসনাধীন বাংলা বাজিমাত করে বেরিয়ে গিয়েছে! ক্রিকেট রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের বক্তব্য, সৌরভের ভূমিকা না থাকলে ইডেনের পক্ষে এতগুলি ম্যাচ আদায় করে নেওয়া সম্ভব হত না। বিশেষত সেমিফাইনালের মতো ম্যাচ। প্রথমে ঠিক ছিল দু’টি সেমিফাইনাল হবে মুম্বই এবং চেন্নাইয়ে। সেখানে শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করে কলকাতা। চেন্নাইয়ের এম চিদম্বরম স্টেডিয়ামের বদলে ম্যাচ চলে আসে কলকাতার ইডেনে।

চেন্নাইয়ের দাবিদার ছিলেন বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতি এন শ্রীনিবাসন। যিনি তামিলনাড়ুর ভূমিপুত্র তো বটেই, চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক হওয়ার সুবাদে ভারতীয় ক্রিকেটে এখনও যথেষ্ট ‘প্রতিপত্তি’ রাখেন। সেই শ্রীনিবাসন তথা চেন্নাই লবিকে হারিয়ে সেমিফাইনাল কলকাতায় নিয়ে আসা সৌরভের ভূমিকা ছাড়া সম্ভব হত না বলেই অনেকে মনে করছেন। এই মহলের মতে, শ্রীনির সঙ্গে লড়াইয়ে সৌরভ জিততে পাকতেন না, যদি না তাঁর সঙ্গে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের ‘ইতিবাচক’ সমীকরণ থাকত।

কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বিজেপি দেশের ক্রিকেট রাজনীতিতে যে ‘সক্রিয়’, তা কারও অজানা নয়। সৌরভকে বোর্ড সভাপতি করার পিছনেও বিজেপির (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের) ভূমিকা ছিল। তাঁর না-হওয়ার পিছনেও সেই দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হলে কোন রাজ্যের কোন শহর কত ম্যাচ পাবে, তা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকারের (এখানে বিজেপির) ভূমিকা থাকবেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ এখনও বিসিসিআই-এর সচিব। কিন্তু ইডনেরে এই প্রাপ্তি আবার দেখিয়ে গেল যে, সৌরভের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের দরজা এখনও খোলা রয়েছে। যদিও সৌরভ নিজে তা মানতে রাজি নন। তিনি আগেই বলেছেন, তাঁর প্রতিটি কাজের ‘রাজনীতি’ দেখা হয়। যা নিয়ে তিনি ‘বিরক্ত’।

সৌরভ নিজে এখন সিএবির কোনও পদে না-থাকলেও তাঁর দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এখন সিএবির সভাপতি। বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা হওয়ার পরেই স্নেহাশিস জানিয়ে দেন, ভাই সৌরভকে তাঁরা বিশ্বকাপের সঙ্গে যুক্ত করবেন। একটা সময় স্নেহাশিসের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয়েছিল। তিনি বিজেপির রাজ্য দফতরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু সৌরভ কখনও ‘সক্রিয়’ রাজনীতির ছায়া মাড়াননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, নবান্নে গিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে নামেননি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বৈশালী ডালমিয়া বালিতে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি প্রচারে চেয়েছিলেন সৌরভকে। কিন্তু সৌরভ রাজি হননি। তবে ভোটের আবহে বালি বিধানসভা এলাকায় স্থানীয় একটি ক্লাবের আয়োজনে ক্রীড়ানুষ্ঠানে বৈশালীর পাশে গিয়ে বসেছিলেন সৌরভ।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সৌরভকে সরাসরি বিজেপির ‘মুখ’ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সৌরভ বা বিজেপি কারও তরফেই তা স্বীকার করা হয়নি। তবে অমিত শাহ এবং মমতা— উভয়েই সৌরভের বাড়িতে গিয়েছেন। মমতার সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক ‘হৃদ্যতাপূর্ণ’।

Leave A Reply

Your email address will not be published.