ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও পাস হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। এই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আসাম। বুধবার থেকে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের মধ্যেই বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির পুলিশ প্রধান পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া ১০ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে এমন চারটি এলাকায় সেনা উপস্থিতি জোরদার করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বুধবারই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আসাম। কোনো সংগঠন ছাড়া সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তবে এ দিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর আসামের চারটি অঞ্চলে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি খোঙ্গসাই জানান, গুয়াহাটি শহরে দুই ইউনিট সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা এলাকায় টহল দিচ্ছেন। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট জেলাতেও মোতায়েন করা হয়েছে সেনা।
বিক্ষোভ থামাতে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এরপরও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। কারফিউ ভেঙে গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ করছেন তারা। জ্বলন্ত কাঠ ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। এমনকি, ডিব্রুগড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একটি দফতরে হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতারা। দফতরের বাইরে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ার-সহ বেশ কিছু সংস্থা আসাম বিমানবন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের উড়ান বাতিল করেছে। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু বিমানের অবনমনও।
এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার একজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ‘‘ডিব্রুগড়ে ৯টি বিমানের উড্ডায়ন বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনও ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে বুধবার যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনও আটকে আছে।’
বুধবারের বিক্ষোভ চলাকালীন ডিব্রুগড়ের ছাবুয়ার একটি রেল স্টেশন চত্বরে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তিনসুকিয়ার পানিতোলা স্টেশন চত্বরেও আগুন ধরানো হয়। এরপর আসামের সব লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত ডিব্রুগড় থেকে সব দূরপাল্লার ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যে টুইটারে আসামবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, সিএবি নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। কেউ আপনাদের অধিকার কাড়তে পারবে না। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। বিজেপির জেলা নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠকে তিনি বলেন, এ রাজ্যে পাঁচ লাখের বেশি অনুপ্রবেশকারীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এর ফলে আমাদের সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের কোনো সঙ্কট দেখা দেবে না।
বুধবার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি (সিএবি) পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দিনভর তুমুল বিতর্কের পর রাজ্যসভায় ১২৫/১০৫ ভোটে বিলটি পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হবে।