‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমিয়বাণী ধারণ করে শুরু হলো ৩৪তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার উদ্যোগে শুক্রবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উৎসবের দুই দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ উৎসব। প্রথমে উৎসব মিলনায়তনের বাইরে, উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে একটি দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ সময় সংস্থার নির্বাহী সভাপতি হিসেবে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন আমিনা আহমেদ। এরপর উপস্থিত সকলে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন।
১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবের মূল পর্ব শুরু হয় দলীয় পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া এবং সভাপতির বক্তব্য রাখেন আমিনা আহমেদ।
বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কলিম শরাফী এবং এর অগ্রজদের স্মরণ করে আমিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুব উচ্ছ্বসিত আপনাদের উপস্থিতিতে। এটা আমাদের প্রেরণা জোগায়। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, সাধনা এটা যেন সবসময় থাকে। নতুন প্রজন্মের কাছে, আমাদের তরুণদের কাছে যেন বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও রবীন্দ্র চর্চা ছড়িয়ে দিতে পারি, সেজন্য আমাদের এই প্রয়াস।’
সকালের এই অধিবেশনে এরপর বিভিন্ন রবীন্দ্রসংগীত দল ও একক শিল্পী সংগীত পরিবেশন করেন। তাদের পরিবেশনায় উঠে আসে সম্প্রীতি, প্রকৃতি, কল্যাণ ও আত্মশুদ্ধির বাণী। যা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকের মনে মুগ্ধতা-প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে দেয়।
বেলা ১২টার দিকে এই অধিবেশন শেষ হয়। কয়েক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকাল ৫টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অধিবেশন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। উদ্বোধন শেষে প্রদান করা হবে গুণিজন সম্মাননা। এ বছর সম্মাননা পাচ্ছেন কিংবদন্তি গিটার শিল্পী এনামুল কবির ও বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলাম। সম্মাননা পর্ব শেষে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান।
বলা বাহুল্য, যুগ যুগ ধরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা ও বাঙালির অস্তিত্বে মিশে আছে। শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে গতিশীল ও সমৃদ্ধ করে চলেছে। তার গানকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখতেই প্রতি বছর এই উৎসব উদযাপন করা হয়। আগামীতেও এই উৎসবের ধারা অব্যাহত রাখা হবে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে শনিবার (১৩ মে) বিকাল ৫টায়। এদিনের পরিবেশনায় থাকছে আবৃত্তি ও সংগীত।
দুদিনের উৎসবে দেশের খ্যাতনামা বেশ কয়েকজন শিল্পী ছাড়াও সংস্থার শতাধিক শিল্পী তিনটি অধিবেশনে দলীয় ও একক পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন।