The news is by your side.

 ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বিতর্ক ,বাদ পড়েছে যেসব দৃশ্য

0 172

‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর পর ভারতের রাজনীতিতে এবার ঝড় তুলেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সমর্থকেরা যেমন নতুন এই সিনেমা দেখতে মুখিয়ে আছে; তেমনি খড়্গহস্ত বাম ও মধ্যপন্থী জনতা, যাঁরা মনে করছেন সমাজকে বিভাজিত করার চেষ্টায় হিন্দুত্ববাদীদের এ এক নতুন চাল। কিন্তু ঠিক কী আছে এই ছবিতে? কেন ছবিটি নিয়ে এত বিতর্ক?

ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে ছবিটির ট্রেলার। ইউটিউবে এত দিন ধরে যে ট্রেলার দেখা যাচ্ছিল, আচমকাই তা বদলে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ট্রেলারে বলা হয়েছিল, কেরালা থেকে ৩২ হাজার নারী সন্ত্রাসবাদী ‘ইসলামিক স্টেটে’ (আইএস) যোগ দিয়েছেন। এটা তাঁদের কাহিনি। বিতর্ক তীব্রতর হওয়ায় গত মঙ্গলবার ছাড়া হয় নতুন ট্রেলার। যাতে দাবি করা হয়েছে, এই সিনেমা রাজ্যের তিন নারীর সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। দাবি করা হয়েছে, হাজার হাজার নিরপরাধ নারীকে ধর্মান্তর করিয়ে সন্ত্রাসী তৈরি করা হচ্ছে। জীবন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

অনেকে বলছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’কেও ছাপিয়ে যাচ্ছে অদা শর্মা অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

ছবিটির মূল চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে, তা নিঃসন্দেহে বিতর্কিত। এই ছবিতে হিন্দু মহিলাদের উপর ইসলাম আগ্রাসনের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় জোরদার হয়েছে বিতর্ক।

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। হিন্দু এই তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে উঠেছেন ফতিমা। অর্থাৎ, তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক ‘ফাঁদ’ পেতে শালিনীকে ফতিমা করে তোলার কাহিনি দেখিয়েছেন পরিচালক সুদীপ্ত।

শুধু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে যাওয়াই নয়, এই ধর্মীয় পরিবর্তন শালিনীর জীবনেও বয়ে এনেছে চরম দুর্ভাগ্য। তাঁকে সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। ধর্মান্তরিত নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

পরিচালক দেখিয়েছেন, শুধু হিন্দু নয়, কেরলে এই ধর্মান্তরণের ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন খ্রিস্টান মহিলারাও। সুদীপ্ত নিজে অবশ্য এই ছবিকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলার ঘোর বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তিনি তৈরি করেছেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম এবং তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

পরিচালকের কথায়, ‘‘আমি কখনওই বলিনি কেরলে যে সব মেয়েদের ধর্মান্তরণ হচ্ছে তাঁরা আইসিস-এ যোগ দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, মেয়েগুলো একেবারে উবে যাচ্ছে কী ভাবে?’’ কেরলে ধর্মান্তরণকে ঘিরে নিষ্ঠুর এবং করুণ চক্র চলছে বলে দাবি পরিচালকের।

তিন নারীকে নিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন বলে দাবি পরিচালক সুদীপ্তের। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের কাহিনি এই ছবিতে দেখানো হয়েছে, ‘‘তাঁদের একজন এখনও আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অন্যজন আত্মহত্যা করেছেন, বিচারের অপেক্ষায় তাঁর মা-বাবা। আর এক মেয়ে এখন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন যাঁকে ক্রমাগত ধর্ষণ করা হয়েছে।’’

মুক্তির আগে ছবিটি থেকে অন্তত ১০টি দৃশ্য বাদ দিতে হয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশও বাদ পড়েছে।

বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিল। তাই সে সব দৃশ্য বাদ পড়েছে। ছবিতে একটি সংলাপ ছিল, যেখানে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দু’মুখো’। ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে এই সংলাপ থেকে।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’র একটি দৃশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আগামী দু’দশকে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে।’’ বিতর্কিত সংলাপের জন্য এই গোটা দৃশ্যই বাদ দেওয়া হয়েছে

এই ছবিকে ইতিমধ্যেই করমুক্ত বলে ঘোষণা করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একাধিক রাজ্যে বিজেপি নেতা হিন্দু মহিলাদের জড়ো করে ছবিটি দেখাচ্ছেন। দাবি, গোটা ভারতের সমস্যার কথা বলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’।

অনেকে বলছেন, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহে সুদীপ্তের এই ছবি বিতর্কে ঘি ঢেলেছে। বিজেপিও ভোটের মুখে ছবিটিকে আঁকড়ে ধরেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.