বেড়া ভেঙে নতুন ঐতিহ্য স্থাপনের পথেই বরাবর হেঁটে এসেছে আনন্দবাজার অনলাইন।
আড়ে-বহরে চোখ টেনে সপ্তাহশেষের ঝলমলে সন্ধ্যায় আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলে শিরোপা পেলেন ‘বছরের বেস্ট’ দশ জন। গত ১২ মাসের এই ১০ জন কৃতী বঙ্গভাষী, বঙ্গবাসীকে খুঁজে নিয়েছে আনন্দবাজার অনলাইন। তাতেই মিলে গেল গঙ্গা-পদ্মা!
আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রধান সম্পাদক স্বয়ং অভীক সরকারও বলেন, ‘‘আমরা স্বভাবকৌতুক, আমরা বেড়া ভাঙি। কত দূর ভাঙতে পেরেছি, তা বলবেন আপনারা। কিন্তু গত এক বছরে আমাদের পাঠকেরা ৩০০ কোটি মিনিট ব্যয় করেছেন আমাদের লেখা পড়ার জন্য। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।’’
এর পরেই কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে থেকে ‘বছরের বেস্ট’-কে খুঁজে নেওয়ার পালা। যাঁর সঞ্চালনায় আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদক অনিন্দ্য জানা এবং নাট্যপরিচালক-অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত।
এই বছর সেরা অভিনেত্রী হিসাবে পুরস্কৃত হলেন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম মুখ পরীমণি। পুরস্কার নিতে মঞ্চে এসে বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীর মত, চলচ্চিত্র শিল্পে আরও এক হয়ে কাজ করা উচিত দুই বাংলার। তাঁর কথায়, ‘‘দুই বাংলার সিনেমা দু’জায়গাতেই দেখানো উচিত।’’
২০১৫ সালে পর্দায় আবির্ভাবের পর থেকে গতি কমতে দেখা যায়নি পরীমণির কর্মজীবনে। ‘ভালবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে পথ চলা শুরু। তার পরেই দৌড়। একই বছর পর পর মুক্তি পায় ছ’টি ছবি।
অল্প সময়েই সে দেশে মিষ্টি প্রেমের ছবির জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন পরীমণি। ‘আরও ভালবাসব তোমায়’, ‘নগর মস্তান’, ‘রক্ত’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনা বন্ধু’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘গুণিন’-এর মতো একের পর এক ছবিতে তাঁর মুখ্য ভূমিকায় মুগ্ধ হয়েছেন বহু দর্শক। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পরীমণিকে নিয়ে উৎসাহ গড়িয়েছে এ বঙ্গেও। এখন কাজের তিনি জানান, আগে এই শহরকে ‘বিদেশ’ মনে হলেও এখন আর তা হয় না
। টান এখন এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ফ্লাইটও মিস করেছেন! তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতাকে আগে বিদেশ মনে হত। এখন হয় না। এ রকমও হয়েছে, আমার ফ্লাইট আজ। কিন্তু আমি দু’পাঁচ দিন পরে গিয়েছি।’’ পরীমণির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং টলিপাড়ার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’-এ সেরা অভিনেতা হলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। বড় পর্দা থেকে ওটিটি— সর্বত্র অনায়াস বিচরণ তাঁর। কখনও তিনি গোয়েন্দা, কখনও আবার এ কালের খেটে খাওয়া মানুষের মুখ। তাঁর হাতে সেরা-র সম্মান তুলে দিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে, গত বছর এই সম্মান পেয়েছিলেন অনির্বাণ। সে বার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শাশ্বত না ঋত্বিক, কে বড় অভিনেতা? তার জবাব এসেছিল— ঋত্বিক। এ বার ঋত্বিককেও একই প্রশ্ন করেন সঞ্চালক। প্রশ্ন ছিল, কে বড় অভিনেতা— শাশ্বত না অনির্বাণ? উত্তর এসেছে, অনির্বাণ!
ঋত্বিককে প্রশ্ন করা হয়, বাংলায় অভিনেতাদের যে নবজাগরণ হয়েছে, অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে কি তা হয়েছে? উত্তরে অভিনেতা বলেন, ‘‘অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে আমাদের নবজাগরণ আগেই ঘটেছে। এখন যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা সেই ধারা বহন করছেন। নবজাগরণ আমাদের অনেক আগেই ঘটে গিয়েছে।’’
এ ছাড়াও খেলা বিভাগে পুরস্কার পেলেন তিতাস সাধু। মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে তিন বঙ্গকন্যা ব্যাটে-বলে কেল্লাফতে করে ময়দান কাঁপিয়েছেন, তাঁদেরই এক জন হলেন চুঁচুড়ার তিতাস। শিল্পপতি হিসাবে সেরার সম্মান পেলেন রবি মোদী। লেখিকা হিসাবে সম্মান পেলেন ‘টেগোর্স ইউনিভার্সিটি: আ হিস্ট্রি অফ বিশ্বভারতী (১৯২১-১৯৬১)’ গ্রন্থের রচয়িতা স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। পুরস্কৃত করা হয়েছে রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুন্ডুকে। পরিচালক হিসাবে সম্মান পেলেন ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ ছবির পরিচালক শৌনক সেন।