শুরু হলো ১৪৩০ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গেট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে। শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে এটি শেষ হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বরিষ ধরার মাঝে শান্তির বারি’ গানটি।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ। বাংলা বর্ষবরণে বাঙালির নানা আয়োজনের মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যতম। গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধান আকর্ষণ মায়ের কোলে শিশু এবং নীলগাই। মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ প্রতীকীভাবে বৈশ্বিক শান্তির বার্তা রয়েছে সেখানে। এ ছাড়া বিপন্ন হারিয়ে যাওয়া প্রাণীদের প্রতীকী হিসেবে রাখা হয়েছে নীলগাই। এ ছাড়াও আছে বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হরিণ, পায়রা।
বাঙালির বর্ষবরণে অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয় সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদান ও চারুকলার শিক্ষার্থীদের ফান্ড রাইজিংয়ের ওপর নির্ভর করে আয়োজন করা এটি। গত ১৯ মার্চ থেকে ফান্ড রাইজিং ক্যাম্পেইন শুরু হয়। প্রথম দিকে রমজানের কারণে আয়োজনের পরিসর ছোট করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে পুরো এলাকা। সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া ভিন্ন দেশের নাগরিকদেও দেখা গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা অংশ নিতে।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল শোভাযাত্রা। তখন এটি ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত ছিল। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রায় থাকে বিশালকায় চারুকর্ম, পাপেট, হাতি ও ঘোড়াসহ বিচিত্র সাজসজ্জা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এরপর চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম পায়।