ঘুষ দিয়ে পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে চাপের মুখে আছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলায় উস্কানির অভিযোগও তদন্তাধীন। আগামী মঙ্গলবার নিউইয়র্কের আদালতে হাজিরা দেবেন তিনি।
প্রেক্ষাপটে দুটি প্রশ্ন জোরালোভাবে সামনে আসছে– দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্প কি জেলে যাবেন? তিনি কি আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের তিনটি পর্যায় থেকে চারটি ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত চলছে। একটি অভিযোগের তদন্ত করছেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। আরেকটির তদন্তে আছেন জর্জিয়া রাজ্যের ফুলটন কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। তৃতীয় অভিযোগের তদন্ত করছে মার্কিন বিচার বিভাগ।
এসব অভিযোগের তদন্তকে ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক সরকারের চক্রান্ত বলে মনে করেন। শুধু তিনিই নন, তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক শীর্ষ নেতাও এটা মনে করেন। এ কারণে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি ভোট দিয়ে যখন ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করলেন, তখন অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের সবার সুর একই রকম ছিল।
প্রতিবাদকারীদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিও। তিনি ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের সমালোচনা করে বলেন, আলভিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছেন। বিচার ব্যবস্থাকে ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মতো’ ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন তিনি।
এসব মামলার চাপ নিয়েও ট্রাম্প নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি বড় ধরনের তহবিলও সংগ্রহ করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক রিচার্ড হাসেন বলেন, অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত যাই হোন না কেন ট্রাম্পকে থামানো যাবে না। সংবিধানের প্রয়োজন মাত্র তিনটি বিষয়ের। এগুলো হলো– জন্মসূত্রে মার্কিনি, বয়স ৩৫ এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অভিজ্ঞতা।
এবার আসা যাক ট্রাম্পকে জেলে পাঠানো যাবে কিনা, সেই প্রশ্নে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের কাছে সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে। অভিযোগ আছে, তার উস্কানিতে ক্যাপিটল হিলে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবনে হামলা হয়েছিল।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি নজিরবিহীন ওই হামলার জেরে পুলিশসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনা এটাও ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা অ্যাটর্নি এবং সাবেক ব্রুকলিন প্রসিকিউটর আর্থার আইদালা বলেন, ‘তাঁকে (ট্রাম্প) জেলে পাঠানো যাবে না– এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তিনি জেলে যেতেও পারেন। কিন্তু আমার কল্পনায় এমন কোনো দৃশ্য নেই যে, ট্রাম্প জেলে এক মিনিট সময় কাটিয়েছেন।’
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড হাসেনও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত হলেও ট্রাম্পকে জেলে পাঠানো হবে, এমনটা তিনি মনে করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রে কার্যত প্রশাসনের শীর্ষপদের ব্যক্তিরা নানাভাবে দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তার উত্তরসূরি জেরাল্ড ফোর্ডের কাছ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত ক্ষমা পেয়েছিলেন। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পিরো এগনিউ দুর্নীতি ক্যালেঙ্কারির জেরে পদত্যাগ করেন। তাঁকেও জেলে যেতে হয়নি। অ্যারন বার নামের আরেক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি অব্যাহতি পান এবং দেশ ছাড়েন।