পরিণীতির সমকালীন তারকারা সকলেই জীবনের নয়া অধ্যায় শুরু করেছেন। তাঁদের বিয়ে উপলক্ষে বলিপাড়া সানাইয়ের আওয়াজে ভরে উঠেছে। কিন্তু পরিণীতি কি চুপিসারেই সবকিছু সেরে ফেলবেন?
আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চড্ডার সঙ্গে কি বাগ্দান সেরে ফেলেছেন অভিনেত্রী?
রাঘব এবং পরিণীতির সম্পর্ক নিয়ে বলিপাড়ায় গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু অভিনেত্রী মুখে কুলুপ এঁটেছেন। সম্পর্ক নিয়ে, বাগ্দান পর্ব নিয়ে এমনকি কবে বিয়ে করছেন— তা নিয়েও মুখ খুলতে রাজি নন পরিণীতি। তবে, এই আচরণ তো নতুন কিছু নয়। পরিণীতিকে এই রূপে এর আগেও দেখেছে বলিউড।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে বরাবর নিশ্চুপ থেকেছেন পরিণীতি। বলিপাড়ার জনপ্রিয় দুই পরিচালকের সঙ্গে বহু বছর সম্পর্কে থাকার পরেও তা আড়ালে রেখেছিলেন অভিনেত্রী। এমনকি, তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়ালেও পরিণীতি প্রতিক্রিয়াহীন থেকেছেন।
অভিনয়ের মাধ্যমে নয়, পরিণীতির সঙ্গে বলিউডের যোগাযোগ অন্য সূত্রে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার তুতো বোন হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। অনেকেই অনুমান করেছিলেন যে, দিদির পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরিণীতিও এক দিন অভিনয়ে নামবেন। কিন্তু বলিপাড়ায় তিনি কাজ শুরু করেছিলেন অন্য ভাবে।
পড়াশোনা শেষ করার পর যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে যুক্ত হন পরিণীতি। সংস্থার মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন তিনি। নিজের কাজে এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, সকলের ভরসা জিতে নিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই পরিণীতির আলাপ হয় বলি পরিচালক মণীশ শর্মার সঙ্গে।
যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন মণীশ। মণীশ অন্য ধাঁচের গল্প বুনতে পারতেন বলে আদিত্য চোপড়া তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন। ২০১০ সালে ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মণীশ।
‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন আদিত্য এবং মণীশ। অভিনেতার চরিত্রে রণবীর সিংহকে পছন্দ হলেও নায়িকার চরিত্রে কে অভিনয় করবেন তা নিয়ে মণীশের মত আলাদা ছিল। অনুষ্কা শর্মাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে আদিত্যকে অন্য এক নায়িকার নাম জানিয়েছিলেন মণীশ।
একই জায়গায় কাজ করার কারণে পরিণীতির সঙ্গে মণীশের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। মণীশ জানতেন যে, পরিণীতি অভিনয়ের জন্যই তৈরি হয়েছেন। তাই ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবির নায়িকার জন্য অনুষ্কা নয়, বরং পরিণীতির কথা জানিয়ছিলেন আদিত্যকে।
কিন্তু মণীশের প্রস্তাব খারিজ করে দেন আদিত্য। তিনি ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবির জন্য রণবীর এবং অনুষ্কাকেই বেছে নেন। কিন্তু পরিণীতির কথা ভোলেননি তিনি। ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার এক বছরের মধ্যেই মুক্তি পায় ‘লেডিজ় ভার্সেস রিকি বহেল’ ছবিটি। যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত এই ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন মণীশ।
‘লেডিজ় ভার্সেস রিকি বহেল’ ছবির জন্য রণবীর সিংহকে আবার অভিনেতা হিসাবে বেছে নেন আদিত্য এবং মণীশ। চিত্রনাট্যের খাতিরে এই ছবিতে চার জন নায়িকার প্রয়োজন ছিল। অনুষ্কা শর্মাকে আবার রণবীরের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা গেলেও বাকি দুই অভিনেত্রীর মধ্যে ছিলেন পরিণীতিও। এ ছাড়া দীপান্বিতা শর্মা এবং অদিতি শর্মা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
বন্ধুত্বের খাতিরে পরিণীতিকে ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন মণীশ, এমনটাই অনুমান করেছিলেন বলিপাড়ার একাংশ। ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবিতে কাজ করার পর আদিত্য তাঁর পরবর্তী ছবিতে অভিনেত্রীর ভূমিকায় বেছে নেন পরিণীতিকে।
যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘ইশকজাদে’ ছবিতে পরিণীতির বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন অর্জুন কপূর। কানাঘুষো শোনা যায় যে, এই ছবিতে পরিণীতিকে নায়িকার চরিত্রে নেওয়ার জন্য আদিত্যকে অনুরোধ করেছিলেন মণীশই। মণীশের কারণেই অভিনেত্রী হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পরিণীতি।
‘ইশকজাদে’ মুক্তি পাওয়ার এক বছর পর মণীশের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘সুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’। এই ছবিতেও পরিণীতিকে অভিনয় করতে দেখা যায়। মণীশের সঙ্গে যে পরিণীতির শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক নেই, তার আঁচ পেয়েছিলেন আদিত্য।
এমনকি বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, মণীশের সঙ্গে সম্পর্কে এসেছিলেন পরিণীতি। কিন্তু দু’জনের কেউই প্রকাশ্যে তাঁদের সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু জানাননি। পরিণীতি এবং মণীশকে কোনও অনুষ্ঠান বা শুটিং সেটের বাইরে কোথাও একসঙ্গে দেখাও যায়নি।
শোনা যায়, নিজেদের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখতে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতেন পরিণীতি এবং মণীশ। কাজ নিয়ে হাজারো ব্যস্ততা থাকলেও তার ফাঁকে দু’জনে সময় বার করে ঘুরতে যেতেন।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ‘ফ্যান’ ছবির শুটিং চলাকালীন পরিণীতির সঙ্গে কথা বলারও বিশেষ সময় পাননি মণীশ। তাই শুটিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর রোমে লম্বা ছু়টি কাটাতে গিয়েছিলেন দু’জনে।
কিন্তু মণীশ এবং পরিণীতির সম্পর্কে ছেদ পড়ে। ২০১৭ সালে যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত ‘মেরি প্যারি বিন্দু’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পরিণীতি। ছবিটি বক্স অফিস থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, তার পরেই মণীশের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় পরিণীতির।
মণীশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পরিণীতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, মণীশ তাঁর ভাল বন্ধু। মণীশের সঙ্গে তাঁর নাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে জড়িয়েছে, সে খবর অভিনেত্রীর কানে এসেছে। কিন্তু তিনি এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নন।
শুধুমাত্র মণীশের ব্যাপারেই নয়, বলিপাড়ার আরও এক পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্কে এসেছিলেন পরিণীতি। সেই বিষয়েও প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি অভিনেত্রী। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, মণীশের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর চরিত দেসাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
বলিউডে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন চরিত। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে নিক জোনাসের বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। পরিণীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বলিপাড়ায় গুঞ্জন শোনা যায়।
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, ২০১৬ সালে ‘ড্রিম টিম ট্যুর’-এ যাওয়ার সময় চরিতের সঙ্গে পরিণীতির আলাপ হয়। এই অনুষ্ঠানে পরিণীতি, আলিয়া ভট্ট,সিদ্ধার্থ মলহোত্র, বরুণ ধবন, আদিত্য রায় কপূরের মতো তারকারা আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান করেছিলেন। এই অনুষ্ঠান চলাকালীন তারকাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ ‘বিহাইন্ড দ্য সিনস’ শুট করার দায়িত্বে ছিলেন চরিত। সেখান থেকেই পরিণীতির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয় এবং সেই বন্ধুত্ব অবশেষে প্রেমে গড়ায়।
কিন্তু স্বভাববশত পরিণীতি তাঁর সঙ্গে চরিতের সম্পর্ক নিয়েও মুখ খোলেননি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কিছু অস্বীকার করছি না। আবার কিছু মেনেও নিচ্ছি না। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ করি না আমি। বরং আমার জীবনের এই অংশটুকু সকলের কাছে রহস্য হয়ে থাকুক।’’