ইসরাইলি গোয়েন্দা হিসেবে পরিচিত দেশটির ডানপন্থী রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তোলা ছবিকে ‘এডিটেড’ বলে প্রচার করলেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টির সত্যতা জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুর ও অপরপ্রান্তে থাকা তার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিও থেকে জানা যায়, নুর দেখা করেছেন সাফাদির সঙ্গে এবং সেই ছবিটি প্রেরণ করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা করার’ অভিযোগও করেন নুর।
সম্প্রতি দুবাই সফরে গিয়ে ইসরাইলের রাজনৈতিক নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ ওঠে নুরের বিরুদ্ধে। তাদের দুজনের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
ছবিতে দেখা যায়, একটি রেস্টুরেন্টের সামনে মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর । তবে ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে তোলা বিতর্কিত ছবি ফাঁস নিয়ে নানা নাটকীয়তা করেন তিনি। কখনও এই ছবিকে ভুয়া, কখনও এটিকে এডিটেড বলে দাবি করেছেন।
এবার ফাঁস হওয়া অডিওতে বেরিয়ে এলো পেছনের ঘটনা। এতে জনৈক এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পৃথক তিনটি কল রেকর্ডের কথা শোনা যায়। যেখানে প্রায় ছয় মিনিট কথা বলেন নুর ।
অডিওতে একটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া, দেখা করে বৈঠক করা, ছবি তোলা ও শেষে ছবি ফাঁস হওয়ায় নুরকে ক্ষুব্ধ হতে শোনা যায়।
অডিওর শুরুতেই অপর পাশ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে নুর বলেন, ‘জ্বি তার সঙ্গে মিট করলে আপনাকে জানাবো। আর কেউ আছে না কি?’
সাফাদির সঙ্গে দেখা করলে কোনো সমস্যা হয় কি এমন ভয় থেকে তিনি অপর পাশের ব্যক্তিকে বলেন, ‘আমি দেখা করবো কিনা এনিয়ে এখনো আগ্রহ প্রকাশ করি নাই। আবার সমস্যা হয় কি না।’
এ সময় অপর পাশের ব্যক্তি নুরের কাছে জানতে চান কোনো সুপারিশ আছে কি না? এর জবাবে নুর বলেন, ‘সুপারিশ আছে।’ কিন্তু মেন্দিকে দিয়ে কাজ হবে কি না সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নুর।
পরে অপর পাশের ব্যক্তি নুরকে জানান, মেন্দি লিকুদ পার্টির নেতা। তখন নুর শিপন বসু নামে একজনের সুপারিশের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাকে ওই দুই জন বলছে, চাইলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে পারেন।’
এরপরের রেকর্ডে নুর নিজের ভ্রমণ সুচির কথা জানান ও মেন্দির সঙ্গে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট কথা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।
পরে অপর পাশের ব্যক্তি নুরের কাছে জানতে চান বৈঠকের ছবি আছে কি না? তখন নুর একটি ছবি তোলার কথা স্বীকার করেন। প্রমাণ হিসেবে অপর পাশের ব্যক্তি নুরের কাছে ছবিটি চান। সেই ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে নুরের পাঠানো ছবিটিও দেখা যায়।
সর্বশেষ কথোপকথনে, ওই ব্যক্তির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নুরুল হক নুর। ছবি ফাঁস হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ডকুমেন্টসটাতো অনলি আপনাকেই দেয়া হইছে। সুতরাং এটা আপনি বিশ্বাসের ঘাতকতা করেছেন। আপনি
বিশ্বাসের মূল্য দেননি… আমি আপনাকে দেখি নাই, জানি নাই, চিনি নাই আপনার সাথে শেয়ার করেছি, … আপনি রিয়েলি বলেনতো ভাই আপনি ডকুমেন্টস কাকে পাঠাইছিলেন?
সম্প্রতি নুর ওমরাহ পালনের উদ্দেশে ঢাকা থেকে সৌদি যান। এসময় তিনি কাতার ও দুবাই ভ্রমণ করেন। এখনও তিনি বিদেশে রয়েছেন। সাফাদির সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ্যে আসার পর নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলছেন, ভিপি নুর কি পবিত্র ওমরাহ পালনের কথা বলে বিদেশ ঘুরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সঙ্গে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন?