ডলার সংকটের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল শেষ ব্যাংকিং পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বছরে এত বেশি পরিমাণ ডলার বাজারে বিক্রি করেনি। ডলার বিক্রির কারণে রিজার্ভ কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালে গতকাল পর্যন্ত মোট ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭৪৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। প্রথম ছয় মাসে যার পরিমাণ ছিল ৫১৪ কোটি ডলার। মূলত গত বছরের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে কেনার চাহিদা বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের শেষ ছয় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২৫২ কোটি ডলার বিক্রি করে। প্রথম ছয় মাসে যেখানে কিনেছিল ২৬৫ কোটি ডলার। এর আগে করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর উদ্বৃত্ত ডলার জমা হওয়ায় ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৬৩৭ কোটি ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছর বিক্রি করে মাত্র ৬৩ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গতকাল দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে যা ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল গত বছরের আগস্টে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) দেনা পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভ আরও কমবে। অবশ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে আইএমএফের পদ্ধতি অনুসরণ করে হিসাব করলে নিট রিজার্ভ এখন ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
শুধু সরকারি এলসির দায় মেটাতে বর্তমানে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সার, জ্বালানি ও জরুরি খাদ্যপণ্য আমদানির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোকে ডলার দেওয়া হয়। এর বাইরে জ্বালানি আমদানির জন্য বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের কিছু ডলার দেওয়া হয়।
সংকট মেটাতে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ডলার সহায়তা করতে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আপাতত ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব উৎস থেকেই ডলার সংগ্রহ করে এলসি খুলতে হচ্ছে।