The news is by your side.

আর্জেন্টিনা- ফ্রান্সের বাজিমাতের কৌশল

0 125

গোল শেষ কথা! আজ গোলের জন্যই লড়বে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। লুসাইলে বিশ্ব যেমন আগুনে ম্যাচ দেখতে চাইবে, তেমনি গোলউৎসবও। গোল না হলে যে আরও কঠিন টক্কর-টাইব্রেকারের অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে।

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স যে মানের দল তাতে করে সে দিকে যেতে চাইবে না নিশ্চয়ই। এই গোলের জন্য ছুটতে গিয়ে গ্র্যান্ড ফিনালেতে অল অ্যাটাক ফুটবলের পসরাই সাজিয়ে বসতে পারেন মাস্টারক্লাস দুই কোচ।

আক্রমণভাগ

আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের মূল সেনানি লিওনেল মেসি। তাঁকে কেন্দ্র করেই এবারের বিশ্বকাপে অ্যাটাকিং কৌশলটা সাজাচ্ছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। সেমিফাইনাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি ম্যাচে তিন ফরমেশন (৪-৩-৩ বা ৪-৪-২ কিংবা ৫-৩-২) দিয়ে ফাইনালে পা রেখেছে আকাশি সাদারা।

সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমিতে স্কালোনির ফরমেশন ছিল ৪-৪-২। যেখানে ফ্রন্টলাইনে মেসির সঙ্গে রাখা হয় আলভারেজকে। ফ্রান্সের মতো দলের বিপক্ষেও স্কালোনি এই দু’জনকে সামনে রেখে আক্রমণভাগ সাজাতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাঝমাঠে চারজন থাকলেও লেফট ও রাইটে থাকা দু’জন উইঙ্গার হিসেবে কাজ করবেন। যদি ডি মারিয়াকে দিয়ে শুরু করেন স্কালোনি, তাহলে রাইটে ডি মারিয়া আর লেফটে ম্যাক অ্যালিস্টারকে দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ মেসি-আলভারেজ মূল অ্যাটাকে থাকলেও তাঁদের সঙ্গে অ্যাটাক এবং মাঝ মাঠ দুই দিকের কাজটাই করবেন অ্যালিস্টার ও ডি মারিয়া।

ফ্রান্সের কৌশল ভিন্ন। একেবারে সামনে থাকেন অলিভার জিরুদ। তার পরে এক লাইনে তিনজনকে-লেফটে কিলিয়ান এমবাপ্পে, রাইটে উসমান দেম্বেলে আর মাঝে আন্তোনিও গ্রিজম্যানকে রাখেন কোচ দিদিয়ের দেশম। এর মধ্যে মূল অ্যাটাকিং রোলে থাকেন এমবাপ্পে ও জিরুদ। দেম্বেলে রাইট উইংটা সচল রাখার পাশাপাশি ডি-বক্সে চাপ তৈরি করেন, অনেক সময় লেফটে থাকা এমবাপ্পেকেও বল বানিয়ে দেন। গ্রিজম্যান দু’জনের মাঝে থাকলেও তাঁর কাজ অ্যাটাকে পুরোপুরি নয়। তিনি মাঝমাঠ, অনেক সময় ডিফেন্স, আবার আক্রমণ বানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। মূলত গ্রিজম্যান ও দেম্বেলে অ্যাটাকিংয়ের পাশাপাশি বড় মাঝমাঠের সঙ্গে সমন্বয়টা করে থাকেন। এখানেই আসল টেকনিকটা প্রয়োগ করেন দেশম।

মাঝমাঠ

বিশ্বকাপে কোচ স্কালোনিকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে দেখা যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের মাঝ মাঠের ওজন বুঝে তিনি নিজের অংশটা সাজান। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাঝ মাঠে তিনজনকে রাখতে দেখা যায়। সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তিনি চারজন মিডফিল্ডে রেখেছিলেন। যদিও লেফট ও রাইটের সর্বশেষ দু’জনকে দুই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মডরিচদের অভিজ্ঞ মাঝমাঠ টেক্কা দিতে ডি পল ছিলেন রাইটে আর লেফটে ম্যাক অ্যালিস্টার। তাঁরা ফ্রন্টে থাকা মেসি ও আলভারেজকে আক্রমণে সহায়তা করার পাশাপাশি মাঝমাঠ ও ডিফেন্সের মধ্যে ফাঁকফোকরও দারুণভাবে মিলিয়ে দেন।

একইভাবে সেন্ট্রালে থাকা এনজো ফার্নান্দেজ ও পারদেসকে প্রতিপক্ষের আক্রমণে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বলের পজিশন ধরে রেখে খেলতে দেখা যায়। ফ্রান্সের বিপক্ষে স্কালোনি হয়তো তেমন কৌশলে যাবেন না। তবে মাঝ মাঠে তিনজন রাখার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে ব্যাকলাইনে চার আর ফ্রন্টে তিনজন করা লাগতে পারে। এনজোকে সেন্ট্রাল পজিশনে রেখে লেফটে অ্যালিস্টার আর রাইটে ডি পল। যদি ডি মারিয়া শুরুতে থাকেন তাহলে তিনি উঠে যাবেন ফ্রন্টের একেবারে রাইট পজিশনে। আলভারেজ লেফটে আর মেসি সেন্টারে। আবার চারজন রাখলে মিডফিল্ডে ডি পল, সেন্ট্রালে এনজোর সঙ্গে থাকতে পারেন। আর রাইটে ডি মারিয়াকে উইংয়ের সঙ্গে ডিফেন্সের সমন্বয়টাও করতে হবে। ফ্রান্সও এখানে একের ভেতর দুইয়ের কাজটা করে থাকেন। ব্যাকলাইনে সামনে দু’জনকে রাখেন দেশম। যেখানে রাইটে চুয়েমেনি আর লেফটে র‌্যাবিওত। দু’জন মাঝ মাঠের আসল সেনানি হলেও ডিফেন্সিভ মুডে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রিজম্যন এবং দেম্বেলেকেও নিচে নেমে খেলতে দেখা যায়।

রক্ষণভাগ

এই একটা জায়গায় দুই কোচের কৌশল অনেকটাই এক। ব্যাকলাইনে উভয়ে চারজন করে রাখেন। যেটা আবার কিছুটা আগ-পিছ করে। কোনোক্রমেই ‘বাসপার্কিং’ মনোভাব নিয়ে ডিফেন্স দেয়াল দাঁড় করান না স্কালোনি ও দেশম। সেজন্য লেফট ব্যাক ও রাইট ব্যাকে যাঁরা থাকেন তাঁদের একইসঙ্গে ওই জোন কভার করার পাশাপাশি উইং পর্যন্ত আক্রমণে সমন্বয় করতে পারেন। এই যেমন আর্জেন্টিনার লেফটব্যাকে থাকেন মার্কোস অ্যাকুনা। তিনি ম্যাক অ্যালিস্টারের সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি ফ্রন্টলাইন পর্যন্ত সচল থাকেন। অন্যপাশে মলিনা বা মন্টিয়েলকেও একই কাজ করতে দেখা যায়। সেন্ট্রালে সাধারণত দু’জন ডিফেন্ডার থাকেন। যেখানে ফ্রান্সের কোন্তে ও ভারানে আর আর্জেন্টিনার রোমেরো ও ওতামেন্ডি।

আর্জেন্টিনা ৫-৩-২ ফরমেশনে গেলে, তিনজন সেন্টারব্যাক নামাবে। তখন রোমেরো, ওতামেন্ডির সঙ্গে লিসান্দ্রো থাকবেন। চারজন ধরলে রোমেরোকে দেখা যায় জোন কভার করে খেলতে। তিনি খুব একটা ওপরে ওঠেন না। যেটি ওতামেন্ডি করেন। যেহেতু দুই দলের আক্রমণই দুর্দান্ত। তাই রক্ষণভাগটা সবাই চাইবে জমাট রাখতে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে প্রথম টার্গেট থাকবে মেসিকে জায়গা না দেওয়া বা তাঁর পায়ে বল বেশিক্ষণ রাখতে না দেওয়া। যে কাজটি করতে হবে দুই সেন্টারব্যাক ও মাঝ মাঠে থাকা চুয়েমেনি এবং র‌্যাবিওতকে। শুরুতে মেসিকে বাধা দেওয়া চেষ্টা করতে হবে র‌্যাবিওত ও চুয়েমেনিকে, যদি আক্রমণটা মাঝমাঠ হয়ে আসে। তবে আর্জেন্টিনা লং পাসে কিংবা কাউন্টার অ্যাটাকের কৌশল নিলে মেসি বা আলভারেজকে থামাতে ফ্রান্সের দুই সেন্টারব্যাককেই ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হবে। একইভাবে এমবাপ্পের জন্য লেফট জোনে শুরুতে ডি পল, এরপর মলিনা সর্বশেষ দুই সেন্টারব্যাককে করতে হবে আটকানোর কাজটা। একই সঙ্গে জিরুদের সঙ্গে আরেকজনকে রাখতে হবে।

কথা থাকে, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ছক পাল্টে যায়। সেটি ফ্রান্সের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি আর্জেন্টিনার বেলায়ও। যে কাজটা বেশি করেন স্কালোনি। সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হারের পর একেক ম্যাচে একেক রকম ফরমেশনে খেলতে দেখা গেছে মেসিদের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.